Sunday, August 27, 2017

অভিশপ্তেরা(Intro)

অভিশপ্তেরা
                     -মোঃ সোহান আরাফাত






ভূত প্রেত নিয়ে লেখা কিছু না।এই গল্পটা আমি সেই সব কিশোর/কিশোরীদের জন্য লিখছি যারা হয়ত অনেক চিন্তায় আছে (অথবা ভয়ে আছে) তাদের আশেপাশের দুনিয়াটা এমন কেন? অনেকেই লিখে থাকেন গল্পের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।আমি এমন কিছু লিখব না। মিল অমিল সেটা পাঠক/পাঠিকারা ঠিক করবেন। গল্পটি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে লেখা নয়। এই গল্পটি আমার ব্লগে পাবেন। www.limitless13579.blogspot.com।  এখানে ovishoptera ট্যাগ এ লেখাটা পাওয়া যাবে। চ্যাপ্টার বাই চ্যাপ্টার গল্পটি রিলিজ হবে।।কতদিনে লেখা শেষ হবে জানি না!

-ফার্মগেট, ঢাকা।
২৫-আগস্ট,২০১৭









Chapter-1 (বন্ধুত্ব এবং ঘৃণা)
সুহানের হাতে একটা সমস্যা ছিল। খুব বেশি উত্তেজিত হলে ওর হাত কাঁপতো। অত্যন্ত বাজে একটি সমস্যা। এই সমস্যাটা শুরু হয়েছিল ক্লাস ২/৩ থেকে। এর কোন সঠিক সমাধান সে পায় নি। অনেকবার চেষ্টাও করেছে সমস্যাটা পাশ কাটিয়ে এক্সাম হল এ জোরে লেখার জন্য, কিন্তু লাভ হয়নি। জোরে লিখতে গেলেই হাত এঁটে আসতো। জোর করে লিখতে গেলে লেখা বোঝার মত থাকত না। ক্লাস ৩ থেকে ৮ পর্যন্ত এর জন্য তাকে এক্সাম এর মধ্যেই ৫ মিনিট করে বসে থাকা লাগত। প্রচন্ড ব্যাথা হত হাতে। কিন্তু কিছু করার নেই,হাত কাঁপছে তো!
টিচাররা এর জন্য বকেছেও অনেক। ব্যাপারটা আসলেও উদ্ভট। একটা ছেলে লিখতে লিখতে হুট করে লেখা থামিয়ে দিচ্ছে। এই খবর বাসা পর্যন্তও চলে গেল। বাসায় তার মা  বকাবকি শুরু করল........
ক্যাম্পাসে বসে সুহান এগুলো চিন্তা করছে। এখন সমস্যাটা নেই।একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ২ বর্ষের ছাত্র সে। হাতের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই চিন্তাগুলো চলে আসে তার মাথায়। কি কঠিন দিন ছিল সেসব। মনে হলেই খারাপ লাগে। হঠাৎ রিমার ডাকে চমকে যায় সে। সুহানের ক্লাসমেট। সুহানকে ডেকে বলল,"সুহান ক্লাসে যাবে না?"
কয়েকটা কারনে সুহান রিমাকে পছন্দ করে না। অন্যতম কারন এই মেয়ে পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক আত্মকেন্দ্রিক। আরও ভালোভাবে বলা যায় স্টুডেন্ট ভাল হওয়া সত্বেও ভাব নেয় কিছুই পড়ে নি।কিছুই জানে না। অথচ রেজাল্ট অনেক ভাল। সুহানের মাঝেমাঝেই মনে হত মেয়েটাকে ডেকে বলে, "তোমাকে আমি ঘৃণা করি।" কখনও বলে নি। সুহানের একটা কোড লিস্ট আছে,সেখানে একটা নিয়ম আছে সেটা হল কারো মনে সে কখনও কষ্ট দেবে না। এটা সে ইন্টারে পড়াকালীন বানিয়েছিল। তাই সুহান হেসেই উত্তর দিল," চল একসাথেই যাই।"এই বলে দুইজন চলে গেল ক্লাসে।
যদিও রিমাকে সুহান অপছন্দ করে তারপরেও এই একটা মেয়ে সবার থেকে আলাদা ছিল। তার সেমিস্টার এর সব মেয়েরাই সুহানকে তুই করে ডাকত। সুহানের এটা মোটেও ভালো লাগত না। মেয়েদেরকে (সমবয়সী/বয়সে বড়) সাধারণতঃ সে তুই-তোকারী করে না। শুধু তার ফুপি বাদে( বয়স সুহানের থেকে ১২-১৩ বছর বেশি)। একটা মেয়ে যদি তুই বলা শুরু করে তাহলে তাকে তুমি বলাটা বেখাপ্পা হয়ে যায়।বাধ্য হয়ে সুহানও তুই বলা শুরু করে।তবে ব্যাপারটা ধরে রাখতে পারে না,তুমি চলে আসে। এই একটা মেয়ে সুহানকে কখনও তুই বলার চেষ্টাও করে নি। ফেসবুকেও না।সামনা সামনিও না। সুহানও কখনও বলে নি।
দুইজন একই সাথে ক্লাসে ঢুকল। প্রায় সময়েই রিমার পাশে বসে সুহান। সাধারণত সবাই পিছনে গিয়ে বসে।সুহান সামনে বসে।আর রিমাও সামনে বসে। এটাও আরেক ফেনোমেনা। ক্লাসে বেশ মনোযোগী দুইজনেই।
তখনও ক্লাস শুরু হয়নি। সুহান আবারও চিন্তায় ডুবে গেল। ইন্টারমিডিয়েট এর সময় সে সায়েন্স এর যে ক্লাসগুলো করত সেখানে স্টুডেন্ট ছিল সব মিলিয়ে ২৩ জন। সেটাও খাতা কলমে। কিন্তু কখনই ১০/১১ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী দেখা যেত না। ওরা সবাই সামনের বেঞ্চে বসত। শীতকালে ব্যাপারটা মজার হত।
ক্লাস শুরু হয়েছে। সুহানের পছন্দের ক্লাস হচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক্স এর উপর। এই সাবজেক্ট টা ওর খুব প্রিয়। মেশিন অথবা মেকানিকাল টা তার মোটেই ভাল লাগত না। বেশ কিছু কারনে ভালো লাগত না। তার মধ্যে একটা হল রুটিন এর টাইমিং। ক্লাসগুলো খুবই বাজে সময়ে দেওয়া। দেখা গেল কোনদিন দুইটা ক্লাস কিন্তু ৬ ঘন্টার মত ক্যাম্পাসে থাকা লাগে। এর চাইতে বাসায় ঘুমাতে বেশি ভালো লাগে সুহানের। এমনিই প্রাইভেট ভার্সিটির পড়া,তার উপর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট আসতে জান ছিঁড়ে যেত ওর। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে ঝামেলাজনক ব্যাপারটি হল এদের কোন হোস্টেল নেই। যে যেভাবে, যেখানে ইচ্ছা থাকো। এর জন্য অসুবিধাও কম হয় না। অনেকেই আছে যারা দূরে ফ্যামিলির সাথে থাকে। সেখান থেকে আসতে যেতেই সারাদিন শেষ হয়ে যায়। যদিও মোহাম্মদপুর অনেক দূরে ছিল না। কিন্তু প্রতিদিন বাসে করে আসাটা ওর জন্য কষ্ট হয়ে যেত। এই সেমিস্টার এর পর থেকে সে ফার্মগেট এ চলে যাবে। এমন একটা যায়গায় উঠবে যেখান থেকে ক্যাম্পাস টা পায়ে হাঁটা দূরত্বে হয়।
*
ফার্মগেট! শিক্ষার ব্যাবসাকেন্দ্র। কোচিং-ক্যাম্পাসে ঠাসা এই জায়গাটা তে শুধু শিক্ষার ব্যাবসা চলে। অন্তত সুহান তিন বছর আগে থেকে যা দেখে আসছে তাতে করে এর চেয়ে ভালো করে কিছু বলা যাবে না। প্রতিদিন সুহান এখানে আসা যাওয়া করে। কোচিং-এ পড়া ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা হয়, ভীড়ে গায়ে ধাক্কা লাগে। যখন বাসে উঠে তখন দেখে অনেক ছেলেমেয়ে কোচিং এর ২/৩ পাতার শীট এর দিকে বিরস-বিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। একটাই আশা, পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে চান্স পাওয়া লাগবে। সুহানের মনে পড়ে যায় এই দিনগুলোর কথা। উদ্ভাস এ ক্লাস করত সে। বাসায় টেস্ট এর নাম্বার যেত প্রতি সপ্তাহে। এই পাবলিক পাবলিক করে কত কথা না শুনতে হয়েছে তাকে।
সুহান একটা হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। এই যে ছোটবেলা থেকে যত প্রকার ব্রেইনওয়াশ টা করেছে সবাই, এর ফলাফল টা কি হল? শূণ্য নাকি কিছু একটা। সে কি এটা চেয়েছে নাকি তার বাড়ির মানুষগুলোর ডিসিশন এ তার এই দৌড়াদৌড়ি। সে কি হতে চেয়েছিল? আর কি হয়েছে? আদৌ কি কিছু হতে পেরেছে?নাকি........
পাশ থেকে জীবন ঠেলা দিয়ে বলল সুহানকে," এই সুহান,কি বিড়বিড় করছিস?ক্লাস তো শেষ চল বাইরে যাই।" ক্লাসের এই একটা ছেলেকে সুহান পছন্দ করে। ক্যাম্পাসে ১ টা বছর পার করার পরেও সুহান কারও সাথে বন্ধুত্ব করতে পারেনি। ক্লাস ৬ থেকে সুহানের একটাই ফ্রেন্ড ছিল,শিশির। ফ্রেন্ডশীপ বলতে সুহান যেটা বুঝে সেটা হল, "বন্ধু হল এমন একটি প্রানী যারা এক জন আরেকজনের সমস্যা টা বুঝে,যার সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করা যায়"। ছোটবেলা থেকেই সে দেখে এসেছে সবাই বন্ধুত্ব করে কোন না কোন একটা কারনে। কেও পড়াশুনার ক্ষেত্রে,কেও ব্যাবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে,কেও বা আবার চাকরী করতে গিয়ে। শিশিরের সাথে সুহান এর বন্ধুত্ব হওয়ার কারন টা পড়াশুনার উছিলায় হয়নি।সে চায়নি পড়াশুনা দিয়ে তাদের বন্ধুত্ব শুরু হোক। এই বন্ধুত্ব বেশিদিন টিকে না।
এরা প্রায় একই টাইপের ছেলে ছিল। দুইজনেই গল্পের বই পড়ত। সায়েন্স নিয়ে দুইজনেরই আগ্রহ ছিল প্রচন্ড। এভাবেই মতের মিল হতে হতে এরা বন্ধু হয়। যেহেতু পড়াশুনা থেকে এই বন্ধুত্ব শুরু হয়নি তাই ১০ বছর পরেও এদের মধ্যে বন্ধুত্ব একই রকম থেকে গেছে। যদিও দুইজন দুই সাবজেক্ট এ আছে।কিন্তু তারপরেও তাদের যোগাযোগ ভাল।
এই জন্যেই হয়ত নতুন ফ্রেন্ড বানাতে পারেনি সুহান। গত এক বছরে অনেক ছেলেমেয়েই তাকে দোস্ত,বন্ধু বলেছে,কিন্তু কারও চোখেই সে শিশিরের ছায়া দেখে নি। জীবন একটু অন্যরকম ছেলে। ভাল খারাপ যাই হোক, নীতিবান ছেলে। সবার সাথে সমান ভাবে মেশে। কারও উপর জোরাজোরি করা অভ্যেস নেই। হাসিখুশী,ফ্লার্টি টাইপ। শিপন এর পরে জীবন এর সাথেই বেশি কথা হত সুহানের। একেই বন্ধু ভাবে সুহান। যদিও লাইব্রেরী তেই বেশি সময় দেয় সুহান। তারপরেও জীবনের সাথেই সে বেশি ঘোরে। ব্যাপারটা রিমা অপছন্দ করে অবশ্য। জীবনের ফ্লার্টিনেস টা সহ্য হয় না রিমার।
প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর সুহান ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারে নি। তার জন্য ক্যাম্পাস লাইফ টা একটা বিভীষিকাময় যাত্রা ছিল। এক টানা ক্লাস,দিনের পর দিন। যদিও ছুটি পেত সপ্তাহে ২ দিন কিন্তু তারপরেও এই ২ দিন টাও অনেক যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যেত। সারা সপ্তাহের পড়া এই দুই দিন কম্প্লিট করা লাগত। সবাই নতুন ছেলেমেয়ে,কেও কাওকে চেনে না। কি অদ্ভূত একটা অবস্থা। তারপরেও ২-৩ দিনের মধ্যে সবাই এমন একটা ভাব শুরু করল যেন এরা একে অপরকে অনেকদিন ধরে চেনে। এদের অনেক মিল। সুহান প্রথমে কনফিউজড ছিল। কেও কাওকে জানে না চেনে না তারপরেও এই হঠাৎ মিলমিশ। অদ্ভূত!!
সুহানের এলাকার কিছু ছেলেমেয়ে ছিল যারা আগে থেকেই ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ছিল। এদের কারও কারও সাথে সুহানের ভাল সম্পর্ক কারও সাথে খারাপ। তবে সুহান চেয়েছিল এবার তার একটা ফ্রেশ স্টার্ট হোক। যদিও তার স্কুলজীবনের এক ক্লাসমেট  "রিক্ত" হতে দেয় নি। এই একটা ছেলে যে কিনা সুহান এর টাইপ এরই না,সে এসে পড়ল সুহান এর সেকশন এই,একই ক্লাসে। এই ছেলেটা অনেক বিরক্ত করত সুহানকে। ২য় বর্ষে এসে অবশ্য ব্যাপারটা ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু ফ্রেশ স্টার্ট টা হয়নি সুহানের।
এই ফ্রেন্ডস,রিলেশন,ক্লাসমেট এর কনফিউশন নিয়ে সুহান এর দিনগুলো পার হচ্ছিল। এই দৌড় ঝাঁপ এর মাঝে সুহান একটা ব্যাপার টের পায়নি। লাইফ তাকে ভয়াবহ একটা জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে।

PDF : https://drive.google.com/file/d/0B6i1IEvpnM6za2ZrSWgwc0liRms/view?usp=drivesdk

No comments:

Post a Comment