Monday, January 22, 2018

হতে পারে - সোহান আরাফাত

হতে পারে আজকের পর থেকে কারো কারো সাথে আর দেখা হবে না,
হতে পারে আজকের পর অনেকেই আর পোস্টে লাইক দেবে না,
হয়ত বা আর মেসেজিং হবে না সেভাবে,কিংবা কখনই,
হয়ত দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাবে লেখাগুলো,
নোটিফিকেশন এর যন্ত্রণায় করে দেবে ইগ্নোর,

হতে পারে প্রচন্ড দরকার পড়লেও আর আসবে না কাছে,
জিজ্ঞেস করবে না কখনও লজিক গেট দিয়ে কিভাবে প্রোজেক্ট তৈরি করে,
কিংবা স্যার কি করেছিল গত সপ্তাহে,

হতে পারে ভয় পেয়ে আর চোখে চোখ মেলাবে না অনেকেই,
হতে পারে ভুল ভেবে, মিথ্যা অজুহাতে, দূর করে দেবে আমায়,

হতে পারে, হয়ত।

কিন্তু জেনে রেখ,
হতে পারে তোমাদের এড়িয়ে যাচ্ছি এমন টা ভাবো।
না, এড়িয়ে যাই না কখনও,
শুধু আমার প্রতি তোমাদের ঘৃণা কে সম্মান দিয়ে পাশে সরে আসি।

হতে পারে আমি উঁকি দেই দেখতে, ফায়ার এক্সিটে কিংবা কোন চিপায় চাপায় কেও আছে কিনা বসে,খাতটা ধরে বিরস নয়নে।

হতে পারে তোমায় পছন্দ করি। কিন্তু হয়ত বন্ধু হতে চেয়ে। তোমাদের লীলাখেলার সাথী হয়ে নয়।

হতে পারে আমি এখনও বসে থাকি, কেও আমায় বলবে এসে, সমস্যা কি সমস্যা কি? সমাধান টা দিতে পারি।

হতে পারে,,হুম,,হতে পারে।।।

Thursday, January 18, 2018

Shohan's Lab - Online shop for electronics products

I am currently running an Online Shop for selling Electronics Products in Bangladesh. Search for Shohan's Lab anywhere on Google or Facebook to find my shop.
URL: limitless13579.web44.net/item_available

Tuesday, January 16, 2018

Ovishoptera (বিবিধ অধ্যায় পূর্ণ) -1

অভিশপ্তেরা- (বিবিধ অধ্যায়-১)-নিরুদ্দেশ!!!!
(8-January-2018 12:00AM)
রাত হয়ত ১ টা বাজে। প্যারাক্যাফেইন খেয়ে সুহান একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে। শরীর ভয়ানক গরম। কপালে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
সুহান জানে সে ঘুমাতে পারবে না। ক্যাফেইন তাকে ঘুমাতে দেবে না। তাকে চিন্তাগুলো করতে জোর করবে। সন্ধ্যা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। এই রুম থেকে অই রুম। তার মেসের কাজের বুয়া বেশ ভয় পেয়ে যান। তিনি ভাবেন," সুহান কি জ্বিন গ্রস্থ?" তাকে ডেকে কথা বলেন, এটা ওটা জিজ্ঞেস করেন। কথা বলার পর বুঝতে পারেন কিছু একটা চিন্তা করছে সুহান ভাই। তাই আর না ঘাটিয়ে কাজে ফিরে গেলেন।
এদিকে মোটামুটি এই ঘর ওই ঘর ঘুরতে ঘুরতে প্রায় দুই ঘন্টা পর সুহান খেয়াল করল, তার গা গরম হয়ে গেছে। তখনও ১০ টা বাজে নি। শীত লাগছে। খেয়াল করল বাইরের রুমের একটা জানালা খোলা ছিল। বাতাস ঢুকছে। এখন মাথাও ব্যাথা করছে। আমিরুল ভাই সেদিন রাত্রে আসতে দেরী করল। শিহাব ভাই আসল আরও পরে। তখনও সুহান বাইরের রুমে ঘুরছেই। শিহাব ভাই এসে কলিংবেল দিতেই দরজা খুলে দিল সুহান। শিহাব ভাই তো অবাক," কি ব্যাপার সুহান ভাই। আপনি অই রুম থেকে এত তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন? সুহান বলল,"না ভাই এই রুমেই ঘুরতে ছিলাম।"
এদিকে চিন্তায় মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় সুহানের মা ফোন দিয়েছিল। দুইবার ফোন দিয়েছিল। প্রথমবার ফোন দিয়েই টের পেয়েছিলেন কিছু একটা ঝামেলা আছে। আবার ফোন দিলেন জিজ্ঞেস করলেন কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। এই কথার মধ্যে সুহান বুঝতে পারলো দিন যত পার হয় সন্তানের সাথে সাথে সন্তানের প্রতি মাতৃত্বও বড় হতে থাকে।৫ বছর আগে যা ছিল এখন আর তা নেই। ছোট বেলায় মন খারাপ করলে জিজ্ঞেস করত পেটে কোন সমস্যা আছে কিনা, কিছুদিন পর বলত কেও কিছু বলেছে কিনা। সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে চমকে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,কাউকে পছন্দ হয়েছে কিনা? রেজাল্ট খারাপ হয়েছে কিনা?
কি অদ্ভূত। একেবারে জায়গামতো কোয়েশ্চেন করে ফেলেছে। কিন্তু তারপরেও সুহান কনফিউজড। আসলেই কি কাওকে পছন্দ হয়েছে নাকি অন্য কিছু। সব মিলিয়ে সুহান তার মন খারাপের ৩ টা কারন বের করল।
রাত ১ টা বাজতে তখন আর ঘন্টা খানেক মত বাকি।একবার মনে হল মাথা ঘুরে পড়েই যায় কিনা। কোনমতে সামলে নিয়ে ১ টায় আর সহ্য করতে না পেরে খেয়েই ফেলল ওষুধ। ওষুধ খাওয়ার পর মনে হল কাজটা ঠিক করে নি সে। আর মাত্র ১৫ মিনিট পরেই তার ঘুম উড়ে যাবে। শুরু হয়ে যাবে তার অটোনমাস এনালাইজিং প্রোসেস। এর চাইতে এলাট্রোল টা খেত।। ঘুম হত জব্বরদস্ত একটা। কিন্তু পরের দিন সকালে তাকে একটা ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। ১১ টায় ক্লাস। ১০ টায় চলে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই একটা প্যারাক্যাফেইন ই খেয়ে ফেলল।
এরপর শুরু হল সেই অস্থিরতা। কাল কি বলবে কাল কি বলবে? ঠিক একই ভাবে শুরু হল আরেক চিন্তা।  সেই ৩ টা কারন। প্রথম টা এমন কিছু না। বাকী দুইটা সিরিয়াস, ২য় টা হল অন্যের অবহেলা জনিত কারন। তাকে জোর করে অবহেলা করা হচ্ছে। ৩য় টা আরও ভয়ানক। সে একটা মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছে। গত কয়েকদিন হল সে এমন কিছু কথা বলে ফেলেছে যেগুলা বেসিক্যালি মেয়েদের প্রোপোজ করার জন্য বলা হয়। যদিও সে মজা করে বলত।কারন....... কারণ টা বেশ জটিল। কিন্তু রিপ্লাই গুলো তার কাছে ক্রমেই সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিল। তাই তাকে বোঝানো দরকার তার প্রতি তার অনূভূতি টা কি।
ততক্ষণে সে বিছানা ছেড়ে আবার বাইরের রুমে চলে গেছে সে। এবারে সে গিয়েই জানালা টা বন্ধ করে দিল। তারপর শুরু হল চিন্তা। কিভাবে বুঝাবে আসলে কাহিনী কি হয়েছিল!
অনেক্ষন চিন্তা করার পর সে ভাবল কাজ যা করার সে জ্বরের মাথায় সন্ধ্যায় করেই ফেলেছে। মন খারাপ থাকলে যা করে সে। লেখে। অনেক লেখে। যতক্ষন পর্যন্ত মন না ভাল হয় ততক্ষন। এই লেখাটা সে দেবে তাকে। কিন্তু এখানেও একটা ঝামেলা আছে। সে এই লেখাটা পড়তে চাইবে না। কিন্তু তারপরেও এই ভুল বোঝাবুঝির একটা অবসান হতে হবেই। লেখাটা বের করে ভাবছে সুহান কোনটুকু দেবে। ঠিক করে ফেলল কোনটুকু দেবে।এর মাঝে  একবার আমিরুল ভাই টয়লেট করতে উঠে দেখে সুহান কিছু একটা হাত নাড়িয়ে হিসাব করছে। বেশ ভয় পেয়ে একবার ভাবল জিজ্ঞেস করে দেখে সমস্যা কি। তারপর ভাবল পরের দিন বলবে।
এরপর ঘুমানোর চেষ্টা করল সুহান। খালিপায়ে ঘুরে ঘুরে মেঝের ঠান্ডা গায়ে মেখে আবার এক দফা ঠান্ডা বাঁধিয়ে সে ঘুমাতে গেল। তখন ৪ টা বাজে। আনুমানিক ৫ টায় ঘুমিয়ে গেল।

(1-January-2018)
ফেসবুকে একটি পোস্টের জের ধরেই মেয়েটা সুহানকে জিজ্ঞেস করে সাইফিয়ার পরে আর কাওকে তার পছন্দ হয়েছিল কিনা? প্রেমে পড়েছে কিনা? পছন্দ?
হ্যাঁ সুহানের পছন্দ হয়। যদিও পোস্ট টা কাওকে পছন্দ করার ব্যাপারে নয়।সম্পূর্ণ অন্য একটা কারনে সে লিখেছিল সেটা। তারপরেও পছন্দ হয় একজনকে। জিজ্ঞেস যখন করেই ফেলেছে তাহলে বলা যায়। তো সে বলল,"তোমাকেই পছন্দ হয়।"
এইটা শুনে মেয়েটার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। প্রথমে ভাবল সুহান এইগুলা কি বলছে? এইভাবে মেয়েদের পিছে লুচ্চামি করার মানে কি?
তবে খুব বেশি সিরিয়াস না হয়ে সুহানকে সে বলল,"মজা করা বাদ দাও।"
সুহানও সরল সোজা বলে দিল,"নাহ অবশ্যই না। আমার তোমাকে অনেক ভালো লাগে।"
এখান থেকে যে একটা বিশাল জটিলতা শুরু হবে এটা সুহান জানত না। কিছু কিছু মেয়েদের ভিতরে একটা ব্যাপার কাজ করে। হয়ত ভালো লাগে বললেই এটাকে তারা প্রেম ভালবাসা পর্যায়ে নিয়ে যায়।ভাবতে থাকে এরপর হয়ত যন্ত্রণা দেবে।অথবা আরও অনেক কিছু। এখানেও ঘটনা সেরকম হয়ে গেল।ঠিক এখান থেকে দুইজনের কাহিনী দুইদিকে চলে যায়।

(3-January-2018)
সুহান মোটামুটি ভাল ভাবেই ইয়ার্কি মারছে মেয়েটার সাথে। এবারে সুহানের কথার ঠেলায় একরকম ভয় পেয়েই মেয়েটা বলে ফেলে তার বয়ফ্রেন্ড আছে। এবার সুহান আরও মজা পায়। কি বলে এই মেয়ে। এই মেয়ের আবার বয়ফ্রেন্ড আছে। এর তো সারাদিনের রুটিনেই কিছু মেলে না। খুব সম্ভব সাইফিয়ার মত। সাইফিয়ারই সাইক-সিস্টার কিনা। হতে পারে সুহানকে ডিস্ট্রাক্ট করার জন্য সে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। সুহানের অটোনমাস মাইন্ড আবার কাজ শুরু করল। এই মেয়ের যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে, তাহলে সুহানের ১০ টা গার্ল্ফ্রেন্ড আছে, তাও আবার দশ দেশের। কিভাবে এই হিসাব মেলানো যায়?
অনলাইনে একদিন মেয়েটাকে পেয়ে বয়ফ্রেন্ড এর কথা জিজ্ঞেস করল। বলল না। এবারে জিজ্ঞেস করল বয়স কত। যদিও বয়স জানাটা উদ্দ্যেশ্য না। সে দেখতে চাচ্ছিল রিপ্লাই টা সে কতক্ষন পরে দেয়। রিপ্লাই দিতে যত দেরী হবে, কথাটাও তত মিথ্যা হবে। বলাবাহুল্য রিপ্লাই দিতে সে দেরী করেছিল। এইটা একটা অনুসিদ্ধান্ত। সুহানের মাথা এখন কাজ করছে শুধু এই থিওরি টা প্রুফ করার জন্য যে মেয়েটার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। মেয়ের সাথে প্রেম ভালবাসা সেসব চিন্তা তো এখনও বহুদূরে।
(7-January-2018)
আজ ভয়ানক ঠান্ডা পড়েছে। ঢাকায় সাধারনতঃ এমন ঠান্ডা পড়ে না। তাই মেয়েটাও শীতের কাপড় পরে আসে নি। শেষ ক্লাস টা করে মেয়েটা যখন হিহি করে কান চেপে ধরে কাঁপতে ছিল সুহানের কাছে ব্যাপারটা খারাপ লাগল। বাসায় গিয়ে মেসেঞ্জার খুলে মেয়েটাকে মেসেজ দিল,"কাল থেকে শীতের একটা মোটা জামা পরে আসবা।” কথাপ্রসঙ্গে সুহান এবার জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, তুমি কি ভাবছ? আমি কেন তোমাকে এইগুলা জিজ্ঞেস করছি? আমি কি তোমার প্রেমে পড়েছি?  তুমি কি এরকম কিছু ভাবছ যে আমার এইরকম লুচ্চামী করার মানে কি?(লুচ্চামী কথাটা বিব্রতকর হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু হাত বাঁধা কিচ্ছু করার নেই)"
মেয়েটা বলল,"সাইফিয়ার কাছে রিজেক্ট খাওয়ার পর তুমি ব্যাপারটা ভুলে থাকতে চাইছ।তাই এগুলো করছ। এরকম কিছু?"
সুহান এতদিন পর্যন্ত একটা জিনিস ভালভাবে শিখেছে, কোন কিছু ভুলে থাকার চাইতে ফ্যাক্ট টা এক্সেপ্ট করে নিতে হয়। ভুলে থাকার জন্যেও সেটাকে কয়েকবার মনে করার দরকার পড়ে। এটা শুধুই নিজের ইগো পঁচানো ছাড়া কিছুই না। তাই রিপ্লাই দিল,"মোটেও না।" এরপর আবার সেই বয়ফ্রেন্ড এর ক্যাঁচাল। আজকে সে মেয়েটার মাথায় ঢুকেই ছাড়বে। কিন্তু শেষমেষ মেয়েটা রেগে গিয়ে কয়েকটা কথা বলে সেদিনের মত গায়েব হয়ে গেল মেসেঞ্জার থেকে।

(8-January-2018 8:00AM)
সকালে ঘুম থেকে উঠে সুহান এর মাথায় বাজ পড়ল। সে গত রাত পুরোটা সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে শেষ করে ফেলেছে। কি বিপদ! মাথাটা হালকা লাগছে এখন। তাই বুঝতে পারল ব্যাপারটা।তখন বাজে সকাল ৯ টা ৩০। পায়জামা টা পরেই শীতের মধ্যে বের হয়ে গেছে। বাজার করতে হবে। কোনমতে শীতের মধ্যে কয়েকটা জিনিস নিয়ে এসে গায়েব হয়ে গেল ক্যাম্পাসে। এই ক্লাস অই ক্লাস ঢু দিয়ে খুঁজছে সে মেয়েটাকে। মেয়েটাকে যন্ত্রণা দিয়ে ফেলেছে অনেক। একটু দেখা করে অন্তত বলা উচিৎ কিছু একটা। পেয়ে গেল তাকে।ক্লাসে ছিল। কিছু বলল না। ক্লাস টা শেষ হওয়া দরকার। তারপর দেড় ঘন্টার ব্রেক।
ক্লাস শেষ করে উঠে মেয়েটার পিছে পিছে গেল। মেয়েটা একটা নীল রং এর শীতের কাপড় পরে এসেছিল। সাথে ওড়না চাপিয়ে। দেখতে ভালই লাগছিল।  সাথে রহিম ছিল। এজ ইউজুয়াল এরা দুইজন এক সাথেই থাকে। ভাল বন্ধু তারা। ৩ জন এক সাথে বাইরে গেল। ঠান্ডা পড়েছে সেই। চা খাওয়ার জন্য গেল সবাই। যদিও সুহান চা খায় না তারপরেও সাথে থাকা লাগবে। চা খেতে খেতে রহিমের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা কথা ভাবছে। এই ছেলের কিছু একটা কাহিনী আছে। রসবোধ একেবারেই নেই। তবে অনেক ভাল একটা ছেলে।
ক্যাম্পাসে গিয়ে রহিম বুঝতে পারে সুহান মেয়েটাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। তাই বলল, "সুহান তোমরা যাও, আমি একটু বাইরে যাব।" এদিকে সুহান রহিম কে ছাড়বে না কারন সুহান জানে রহিম সাথে না থাকলে ও মেয়েটার সাথে ৫ মিনিটও কথা বলতে পারবে না।
যাই হোক কোনরকম জোর করেই ধরে নিয়ে যাওয়া হল। এক জায়গায় বসল সবাই। কথা শুরু করল সুহান। যদিও মেয়েটা সামনেই বসে আছে তারপরেও রহিম কে সে আরেকটা মেয়ে মনে করে নিয়ে কথাগুলো বলছে। আশেপাশে অনেকেই ঘুরছে তাই সোজাসুজি মেয়েটাকে বলাটা ঠিক হবে না। এদিকে মাঝখান থেকে সে মেয়েটাকেও বলতে পারছে। আবার দুইজনের সাথে ব্যাপারটা মিটমাট করতেও সুবিধা হচ্ছে।
রহিম কে আনার আরেকটা কাহিনী ছিল। ছেলেমেয়েদের তো অনুভূতি আলাদা। সে চাচ্ছিল এইটা শুনতে যে রহিম তার কথা গুলো শুনে কি বলে। কথাগুলো ছিল এরকম,
সুহান একজনকে পছন্দ করে। জাস্ট পছন্দ করে এটুকু বলাতেই মেয়েটা বলে ফেলে তার বয়ফ্রেণ্ড আছে। সেটা নিয়ে আসলে সুহানের কোন মাথাব্যাথা নেই। সে শুধু একটা ব্যাপার এজিউম করেছিল মেয়েটার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। মিথ্যা বলার কারন হতে পারে মেয়েটার পক্ষে সুহানের সাথে রিলেশনে যাওয়া পসিবল না। অথবা মেয়েটা চাচ্ছে সুহান তার পিছু নিয়ে তাকে বিরক্ত না করুক। অথবা মেয়েটা সত্যিই বলছে। যেটাই হোক উত্তর না। বয়ফ্রেন্ড এর ব্যাপারটা নিয়ে সুহান অনেক কিছু বলে ফেলেছিল মেয়েটাকে। সুহান ভেবে যাচ্ছে এই ব্যাপারটা নিয়ে মেয়েটা তাকে মিথ্যা বলছে।মিথ্যাটা সুহান মেনে নিতে পারে নি। মেনে না নেওয়ার কারণ টাও হাস্যকর।সে মনে করেছিল মেয়েটা তাকে খারাপ ভাবছে। এটা ক্লিয়ার করা দরকার।
আরও একটা মজার কাহিনী হল, সুহান যদিও মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কথা তুলেছিল (শুধুমাত্র জানার জন্য আছে কিনা) কিন্তু এই কথাটা একবারও বলে নি যে সে মেয়েটার সাথে রিলেশনে যেতে চায়। তবে গত রাতে ভেবেচিন্তে সে অন্য কিছু চিন্তা করে রেখেছে। তাই মেয়েটা মানতে রাজী হোক বা না হোক তাকে একবার এইটা অন্তত জানানো দরকার মেয়েটাকে নিয়ে সুহানের অনুভূতিগুলো কি।
তারপর তার কাছ থেকে শুনতে চায় সে কি বলতে চায়।কিছু না বলুক তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সুহান চাচ্ছিল এই ভুল বোঝাবুঝির একটা অবসান হোক। তাই সে বার বার মেয়েটাকে বলতেছিল জাস্ট লেখাটা একবার পড়ে দেখতে। কিন্তু এবারে ঘটনা অন্য দিকে চলে গেল।
রহিম জানতে চাইল," আচ্ছা সুহান তুমি চাইছো তোমার অনুভূতিটা তার সাথে তুমি শেয়ার করবা।"
সুহান- "হ্যাঁ।"
রহিম-"যদি মেয়েটা না শেয়ার করতে চায়?"
সুহান কিছুক্ষণ চিন্তা করল সে নিজেই শুধু মেয়েটাকে বলবে, এখানে মেয়েটার শেয়ার করার ব্যাপার কিভাবে আসে? তারপর ভাবল শেয়ার করা মানে আসলে দুই তরফা এক্ট, এইটা দুই জনেরই করা লাগে। কিছুটা লেনদেন এর মত। তাই আবার বলল,"না আমি তার টা জানতে চাচ্ছি না। শুধু আমারটা জানাতে চাই"।
রহিম-”মেয়েটা যদি না জানতে চায়? মেয়েটা যদি ইগ্নোর করে তাহলে তুমি কি তাকে বিরক্ত করবা?"
সুহান-"কাওকে বিরক্ত করাটা আমার কোডের বাইরে।"
রহিম-"তাহলে তোমার কোডে কে কে আছে?"
এবারে সুহান মজা পেল। কোড মানে হল নীতিমালা। এখানে কে আছে জানার কোন প্রশ্নই আসে না। এই কাকে ধরে নিয়ে আসছে কথা বলার জন্য। এর থেকে জীবনকে আনলেও কাজ হত। যাই হোক সামলে নিয়ে বলল,"কোড মানে হল নিজের নীতি। কাওকে বিরক্ত করাটা আমার কোডের আওতায় পড়ে না।"
রহিম-"মেয়েটা যদি না জানতে চায়?"
সুহান বলেছিল,"আমার খুব খারাপ লাগবে।"
রহিম- "ধরে নাও তাও যদি সে জানতে না চায়? তারপরেও কি তাকে জোর করবা?"
সুহান- "না আমি জোর করব না"।
রহিম- "তুমি কি চাও তোমাকে মেয়েটা ব্লক করুক? তারপর তুমি বুঝবা যে মেয়েটা না করছে? "।(যদিও সুহান একবারো বলে নি মেয়েটার থেকে হ্যাঁ শুনতে চায় অথবা কোন রিলেশন এ যেতে যায়।জাস্ট তাকে জানাতে চায় তার প্রতি সুহানের চিন্তাটা কি)
সুহান- "আমি তাকে প্রেশারাইজ করব না। কারন তার না টা আমি মেনে নিয়েছি।
মেয়ে ও রহিম একসাথে- "তাহলে আমাদের কারোরই জানার প্রয়োজন নেই।"
মেয়ে- "কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হবে, আমার কিছু পড়তে ইচ্ছা করছে না।" বলে দুইজনেই সুহান কে একা রেখে চলে গেল।
কিছুটা শক খাওয়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সুহান।সবাই জানে এই ক্লাস টা অনেক দেরীতে শুরু হয়। তারপরেও এই সুন্দর অজুহাত। হতে পারে অজুহাত নয়। কিন্তু তারপরেও...... মেয়েটার সাথে রিলেশনে যাওয়ার ইচ্ছা নেই তারপরেও মেয়েটা কোন আগ্রহই দেখালো না। অথচ এই মেয়েই তার সাথে প্রতিদিন লেখালেখি করে। রহিম যদি পড়তে চাইত তাও হত। কিন্তু সেও চায় নি। তারমানে দাঁড়াল এদের কারোরই একে অপরের অনুভূতি নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। অথচ সবাই দাবি করে সবাই সবার বন্ধু। দুঃখজনকভাবে হাস্যকর।

ক্যাম্পাসে ৬ তলায় দাঁড়িয়ে সে নিচে তাকিয়ে আছে।  হঠাৎ করে একটা অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করল সুহান। নিচে তাকিয়ে আজ তার মাথা ঘুরছে না। তার মানে কোন এক ভাবে তার ফোবিয়াটা মুছে গেছে।
ক্লাস শুরু হল অনেক দেরী করে। কি একটা ভয়ানক অবস্থা স্যার ক্লাসেই আসল না আজকে।পুরা দেড় টা ঘন্টা মাটি। মেয়েটা কাছেই ঘুরতে ছিল। কিন্তু সুহানের সাথে কোন কথাই বলল না।
এদিকে সুহানের জ্বর টা বাড়ছে। ভয়াবহ মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে। আচ্ছা সুহানের কি ব্যাপারটা ইগোতে লেগেছে। নাহ ইগোতে লাগে নি। নিজেকে আরেকজনের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরাটা ইগোর আওতায় পড়ে না। তার উপর আরেকজনের উপর ইগো চাপিয়ে দেওয়া সুহানের কোডের বাইরে। এটা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। এবং এও তার আরেকটা কোড সে কখনও কাওকে বিরক্ত করবে না। মন ভেংগে গেল তার।
***
একটা এক্সট্রা ক্লাস করে বাসায় চলে গেল সে। বাসায় এসে নোটবুক টা বের করে খানিক্ষণ দেখল। একটাই আফসোস এই টা যদি সে পড়ত তাহলে হয়ত ঘটনা টা পালটে যেত। সুহান বুঝতে পেরেছে তারা দুইজনেই তার উপর বিরক্ত বোধ করেছে। এরপর হয়ত তারা আর কখনও সুহানের সাথে কথাও বলবে না। চোখে চোখ মেলাবে না।
সুহান সন্ধ্যায় একটা এলাট্রোল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। একবার মনে হল লেখাটা পড়ে ঘুমাতে। কিন্তু আর ইচ্ছা করল না। ঘুমাতে ঘুমাতে চিন্তা করল তার সেই কালো ব্যাখ্যার ইতিহাস। যে ইতিহাস সুহানকে অমানুষের আরেক শ্রেণীতে নিয়ে গেছিল ৫ মাস আগে। তবে এটা সুহান কে মেনে নিতেই হবে, প্রেমে সে পড়েছিল ১ ঘন্টার জন্য হলেও।

পিডিএফ পড়তেঃ

https://drive.google.com/file/d/1ZKm6IY-2Ixmmzl89U08mB--uk4C3s2FW/view?usp=drivesdk

Tuesday, January 9, 2018

অভিশপ্তেরা (বিবিধ অধ্যায়) -নিরুদ্দেশ

অভিশপ্তেরা- (বিবিধ অধ্যায়)-নিরুদ্দেশ!!!!
(8-January-2018 12:00AM)
রাত হয়ত ১ টা বাজে। প্যারাক্যাফেইন খেয়ে সুহান একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে। শরীর ভয়ানক গরম। কপালে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
সুহান জানে সে ঘুমাতে পারবে না। ক্যাফেইন তাকে ঘুমাতে দেবে না। তাকে চিন্তাগুলো করতে জোর করবে। সন্ধ্যা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই রুম থেকে অই রুম।
তার মেসের কাজের বুয়া বেশ ভয় পেয়ে যান। তিনি ভাবেন," সুহান কি জ্বিন গ্রস্থ?" তাকে ডেকে কথা বলেন, এটা ওটা জিজ্ঞেস করেন। কথা বলার পর বুঝতে পারেন কিছু একটা চিন্তা করছে সুহান ভাই। তাই আর না ঘাটিয়ে কাজে ফিরে গেলেন।
এদিকে মোটামুটি এই ঘর ওই ঘর ঘুরতে ঘুরতে প্রায় দুই ঘন্টা পর সুহান খেয়াল করল। তার গা গরম হয়ে গেছে। তখনও ১০ টা বাজে নি। শীত লাগছে। খেয়াল করল বাইরের রুমের একটা জানালা খোলা। বাতাস ঢুকছে। এখন মাথাও ব্যাথা করছে। আমিরুল ভাই সেদিন রাত্রে আসতে দেরী করল। শিহাব ভাই আসল আরও পরে। তখনও সুহান বাইরের রুমে ঘুরছেই। শিহাব ভাই এসে কলিংবেল দিতেই খুলে দিল সুহান। শিহাব ভাই তো অবাক," কি ব্যাপার সুহান ভাই। আপনি অই রুম থেকে এত তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন? সুহান বলল,"না ভাই এই রুমেই ঘুরতে ছিলাম।"
এদিকে চিন্তায় মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় সুহানের মা ফোন দিয়েছিল। দুইবার ফোন দিয়েছিল। প্রথমবার ফোন দিয়েই টের পেয়েছিলেন কিছু একটা ঝামেলা আছে। আবার ফোন দিলেন জিজ্ঞেস করলেন কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। এই কথার মধ্যে সুহান বুঝতে পারলো দিন যত পার হয় সন্তানের সাথে সাথে সন্তানের প্রতি মাতৃত্বও বড় হতে থাকে।৫ বছর আগে যা ছিল এখন আর তা নেই। ছোট বেলায় মন খারাপ করলে জিজ্ঞেস করত পেটে কোন সমস্যা আছে কিনা, কিছুদিন পর বলত কেও কিছু বলেছে কিনা। সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে চমকে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,কাউকে পছন্দ হয়েছে কিনা? রেজাল্ট খারাপ হয়েছে কিনা?
কি অদ্ভূত। একেবারে জায়গামতো কোয়েশ্চেন করে ফেলেছে। কিন্তু তারপরেও সুহান কনফিউজড। আসলেই কি কাওকে পছন্দ হয়েছে নাকি অন্য কিছু। সব মিলিয়ে সুহান তার মন খারাপের ৩ টা কারন বের করল।
রাত ১ টা বাজতে তখন আর ঘন্টা খানেক মত বাকি।একবার মনে হল মাথা ঘুরে পড়েই যায় কিনা। কোনমতে সামলে নিয়ে ১ টায় আর সহ্য করতে না পেরে খেয়েই ফেলল ওষুধ। ওষুধ খাওয়ার পর মনে হল কাজটা ঠিক করে নি সে। আর মাত্র ১৫ মিনিট পরেই তার ঘুম উড়ে যাবে। শুরু হয়ে যাবে তার অটোনমাস এনালাইজিং প্রোসেস। এর চাইতে এলাট্রোল টা খেত।। ঘুম হত জব্বরদস্ত একটা। কিন্তু পরের দিন সকালে তাকে একটা ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। ১১ টায় ক্লাস। ১০ টায় চলে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই একটা রেনোভা প্লাস ই খেয়ে ফেলল।
এরপর শুরু হল সেই অস্থিরতা। কাল কি বলবে কাল কি বলবে? ঠিক একই ভাবে শুরু হল আরেক চিন্তা।  সেই ৩ টা কারন। প্রথম টা এমন কিছু না। বাকী দুইটা সিরিয়াস, ২য় টা হল অন্যের অবহেলা জনিত কারন। তাকে জোর করে অবহেলা করা হচ্ছে। ৩য় টা আরও ভয়ানক। সে একটা মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছে। গত কয়েকদিন হল সে এমন কিছু কথা বলে ফেলেছে যেগুলা বেসিক্যালি মেয়েদের প্রোপোজ করার জন্য বলা হয়। যদিও সে মজা করে বলত।কারন....... কারণ টা বেশ জটিল। কিন্তু রিপ্লাই গুলো তার কাছে ক্রমেই সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিল। তাই তাকে বোঝানো দরকার তার প্রতি তার অনূভূতি টা কি।
ততক্ষণে সে বিছানা ছেড়ে আবার বাইরের রুমে চলে গেছে সে। এবারে সে গিয়েই জানালা টা বন্ধ করে দিল। তারপর শুরু হল চিন্তা। কিভাবে বুঝাবে আসলে কাহিনী কি হয়েছিল!
অনেক্ষন চিন্তা করার পর সে ভাবল কাজ যা করার সে জ্বরের মাথায় সন্ধ্যায় করেই ফেলেছে। মন খারাপ থাকলে যা করে সে। লেখে। অনেক লেখে। যতক্ষন পর্যন্ত মন না ভাল হয় ততক্ষন। এই লেখাটা সে দেবে তাকে। কিন্তু এখানেও একটা ঝামেলা আছে। সে এই লেখাটা পড়তে চাইবে না। কিন্তু তারপরেও এই ভুল বোঝাবুঝির একটা অবসান হতে হবেই। লেখাটা বের করে ভাবছে সুহান কোনটুকু দেবে। ঠিক করে ফেলল কোনটুকু দেবে।এর মাঝে  একবার আমিরুল ভাই টয়লেট করতে উঠে দেখে সুহান কিছু একটা হাত নাড়িয়ে হিসাব করছে। বেশ ভয় পেয়ে একবার ভাবল জিজ্ঞেস করে দেখে সমস্যা কি। তারপর ভাবল পরের দিন বলবে।
এরপর ঘুমানোর চেষ্টা করল সুহান। খালিপায়ে ঘুরে ঘুরে মেঝের ঠান্ডা গায়ে মেখে আবার এক দফা ঠান্ডা বাঁধিয়ে সে ঘুমাতে গেল। তখন ৪ টা বাজে। আনুমানিক ৫ টায় ঘুমিয়ে গেল।
(8-January-2018 8:00AM)
সকালে ঘুম থেকে উঠে সুহান এর মাথায় বাজ পড়ল। সে গত রাত পুরোটা সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে শেষ করে ফেলেছে। কি বিপদ! মাথাটা হালকা লাগছে এখন। তাই বুঝতে পারল ব্যাপারটা।তখন বাজে সকাল ৯ টা ৩০। পায়জামা টা পরেই শীতের মধ্যে বের হয়ে গেছে। বাজার করতে হবে। কোনমতে শীতের মধ্যে কয়েকটা জিনিস নিয়ে এসে গায়েব হয়ে গেল ক্যাম্পাসে। এই ক্লাস অই ক্লাস ঢু দিয়ে খুঁজছে সে মেয়েটাকে। মেয়েটাকে যন্ত্রণা দিয়ে ফেলেছে অনেক। একটু দেখা করে অন্তত বলা উচিৎ কিছু একটা। পেয়ে গেল তাকে।ক্লাসে ছিল। কিছু বলল না। ক্লাস টা শেষ হওয়া দরকার। তারপর দেড় ঘন্টার ব্রেক।
ক্লাস শেষ করে উঠে মেয়েটার পিছে পিছে গেল। সাথে রহিম ছিল। এজ ইউজুয়াল এরা দুইজন এক সাথেই থাকে। ভাল বন্ধু তারা। ৩ জন এক সাথে বাইরে গেল। ঠান্ডা পড়েছে সেই। চা খাওয়ার জন্য গেল সবাই। যদিও সুহান চা খায় না তারপরেও সাথে থাকা লাগবে। চা খেতে খেতে রহিমের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা কথা ভাবছে। এই ছেলের কিছু একটা কাহিনী আছে। রসবোধ একেবারেই নেই। তবে অনেক ভাল একটা ছেলে।
ক্যাম্পাসে গিয়ে রহিম বুঝতে পারে সুহান মেয়েটাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। তাই বলল, "সুহান তোমরা যাও, আমি একটু বাইরে যাব।" এদিকে সুহান রহিম কে ছাড়বে না কারন সুহান জানে রহিম সাথে না থাকলে ও মেয়েটার সাথে ৫ মিনিটও কথা বলতে পারবে না।
যাই হোক কোনরকম জোর করেই ধরে নিয়ে যাওয়া হল। এক জায়গায় বসল সবাই। কথা শুরু করল সুহান। যদিও মেয়েটা সামনেই বসে আছে তারপরেও রহিম কে সে আরেকটা মেয়ে মনে করে নিয়ে কথাগুলো বলছে। আশেপাশে অনেকেই ঘুরছে তাই সোজাসুজি মেয়েটাকে বলাটা ঠিক হবে না। এদিকে মাঝখান থেকে সে মেয়েটাকেও বলতে পারছে। আবার দুইজনের সাথে ব্যাপারটা মিটমাট করতেও সুবিধা হচ্ছে।
রহিম কে আনার আরেকটা কাহিনী ছিল। ছেলেমেয়েদের তো অনুভূতি আলাদা। সে চাচ্ছিল এইটা শুনতে যে রহিম তার কথা গুলো শুনে কি বলে। কথাগুলো ছিল এরকম,
সুহান একজনকে পছন্দ করে। জাস্ট পছন্দ করে এটুকু বলাতেই মেয়েটা বলে ফেলে তার বয়ফ্রেণ্ড আছে। সেটা নিয়ে আসলে সুহানের কোন মাথাব্যাথা নেই। সে শুধু একটা ব্যাপার এজিউম করেছিল মেয়েটার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। মিথ্যা বলার কারন হতে পারে মেয়েটার পক্ষে সুহানের সাথে রিলেশনে যাওয়া পসিবল না। অথবা মেয়েটা চাচ্ছে সুহান তার পিছু নিয়ে তাকে বিরক্ত না করুক। অথবা মেয়েটা সত্যিই বলছে। যেটাই হোক উত্তর না। বয়ফ্রেন্ড এর ব্যাপারটা নিয়ে সুহান অনেক কিছু বলে ফেলেছিল মেয়েটাকে। সুহান ভেবে যাচ্ছে এই ব্যাপারটা নিয়ে মেয়েটা তাকে মিথ্যা বলছে।মিথ্যাটা সুহান মেনে নিতে পারে নি। মেনে না নেওয়ার কারণ টাও হাস্যকর।সে মনে করেছিল মেয়েটা তাকে খারাপ ভাবছে।
আরও একটা মজার কাহিনী হল, সুহান যদিও মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কথা তুলেছিল (শুধুমাত্র জজানার জন্য আছে কিনা) কিন্তু এই কথাটা একবারও বলে নি যে সে মেয়েটার সাথে রিলেশনে যেতে চায়। এদিকে সুহান চাচ্ছে হোক রিলেশন হোক যদিও সে বলে নি। তবে গত রাতে ভেবেচিন্তে সে অন্য কিছু চিন্তা করে রেখেছে। তাই মেয়েটা রাজী হোক বা না হোক তাকে একবার এইটা অন্তত জানানো দরকার মেয়েটাকে নিয়ে সুহানের অনুভূতিগুলো কি।
তারপর তার কাছ থেকে শুনতে চায় সে কি বলতে চায়।কিছু না বলুক তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সুহান চাচ্ছিল এই ভুল বোঝাবুঝির একটা অবসান হোক। তাই সে বার বার মেয়েটাকে বলতেছিল জাস্ট লেখাটা একবার পড়ে দেখতে। কিন্তু এবারে ঘটনা অন্য দিকে চলে গেল। রহিম জানতে চাইল," আচ্ছা সুহান তুমি চাইছো তোমার অনুভূতিটা তার সাথে তুমি শেয়ার করবা। মেয়েটা যদি না জানতে চায়? মেয়েটা যদি ইগ্নোর করে তাহলে তুমি কি করবা?"
সুহান বলেছিল,"আমার খুব খারাপ লাগবে।"
রহিম- "ধরে নাও তাও যদি সে জানতে না চায়? তারপরেও কি তাকে জোর করবা?"
সুহান- "না আমি জোর করব না"।
রহিম- "তুমি কি চাও তোমাকে মেয়েটা ব্লক করুক? তারপর তুমি বুঝবা যে মেয়েটা না করছে? "।(যদিও সুহান একবারো বলে নি মেয়েটার থেকে হ্যাঁ শুনতে চায় অথবা কোন রিলেশন এ যেতে যায়।জাস্ট তাকে জানাতে চায় তার প্রতি সুহানের চিন্তাটা কি)
সুহান- "আমি তাকে প্রেশারাইজ করব না। কারন তার না টা আমি মেনে নিয়েছি।
মেয়ে ও রহিম একসাথে- "তাহলে আমাদের কারোরই জানার প্রয়োজন নেই।"
মেয়ে- "কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হবে, আমার কিছু পড়তে ইচ্ছা করছে না।" বলে দুইজনেই সুহান কে একা রেখে চলে গেল।
কিছুটা শক খাওয়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সুহান।সবাই জানে এই ক্লাস টা অনেক দেরীতে শুরু হয়। তারপরেও এই সুন্দর অজুহাত। হতে পারে অজুহাত নয়। কিন্তু তারপরেও...... মেয়েটার সাথে রিলেশনে যাওয়ার ইচ্ছা নেই তারপরেও মেয়েটা কোন আগ্রহই দেখালো না। অথচ এই মেয়েই তার সাথে প্রতিদিন লেখালেখি করে। রহিম যদি পড়তে চাইত তাও হত। কিন্তু সেও চায় নি। তারমানে দাঁড়াল এদের কারোরই একে অপরের অনুভূতি নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। অথচ সবাই দাবি করে সবাই সবার বন্ধু। দুঃখজনকভাবে হাস্যকর।

ক্যাম্পাসে ৬ তলায় দাঁড়িয়ে সে নিচে তাকিয়ে আছে।  হঠাৎ করে একটা অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করল সুহান। নিচে তাকিয়ে আজ তার মাথা ঘুরছে না। তার মানে কোন এক ভাবে তার ফোবিয়াটা মুছে গেছে।
ক্লাস শুরু হল অনেক দেরী করে। কি একটা ভয়ানক অবস্থা স্যার ক্লাসেই আসল না আজকে।পুরা দেড় টা ঘন্টা মাটি। মেয়েটা কাছেই ঘুরতে ছিল। কিন্তু সুহানের সাথে কোন কথাই বলল না।
এদিকে সুহানের জ্বর টা বাড়ছে। ভয়াবহ মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে। আচ্ছা সুহানের কি ব্যাপারটা ইগোতে লেগেছে। নাহ ইগোতে লাগে নি। নিজেকে আরেকজনের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরাটা ইগোর আওতায় পড়ে না। তার উপর আরেকজনের উপর ইগো চাপিয়ে দেওয়া সুহানের কোডের বাইরে। এটা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। এবং এও তার আরেকটা কোড সে কখনও কাওকে বিরক্ত করবে না। মন ভেংগে গেল তার।

একটা এক্সট্রা ক্লাস করে বাসায় চলে গেল সে। বাসায় এসে নোটবুক টা বের করে খানিক্ষণ দেখল। একটাই আফসোস এই টা যদি সে পড়ত তাহলে হয়ত ঘটনা টা পালটে যেত। সুহান বুঝতে পেরেছে তারা দুইজনেই তার উপর বিরক্ত বোধ করেছে।
সুহান সন্ধ্যায় একটা এলাট্রোল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। একবার মনে হল লেখাটা পড়ে ঘুমাতে। কিন্তু আর ইচ্ছা করল না। ঘুমাতে ঘুমাতে চিন্তা করল তার সেই কালো ব্যাখ্যার ইতিহাস। যে ইতিহাস সুহানকে অমানুষের আরেক শ্রেণীতে নিয়ে গেছিল ৫ মাস আগে।

Friday, January 5, 2018

অভিশপ্তেরা Chapter -4 হতাশা

Chapter-4 (হতাশা)
ভার্সিটিতে ভর্তির জুস টা খুবই বাজেভাবে ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানো হয়। এই জুস খেয়ে এরাও ভ্রান্তিতে ভুগে। একসময় ভ্রান্তিটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সব মা-বাবাই চায় তার ছেলে-মেয়েরা এক সময় নিজে থেকে সব বুঝবে।ব্যাপারটা এত সহজ না। মানুষ একটা জিনিস অনেক ভাবে বুঝতে পারে। বাংলাদেশে সব মা-বাবাই তাদের ছেলেমেয়েদের শেখান সরকারী ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেলে আরামে থাকবা।
এই ব্যাপারটাই একসময় তারা নিজেদের কে ভুল ভাবে বুঝায়। শিক্ষক যখন সাজেশন দেয় সেটা থেকে আমরা নিজেরা আবার সাজেশন করে পড়া শুরু করি। এখানেও ব্যাপারটা সেরকম হয়। অনেকেই আছে ভার্সিটিতে উঠে নিজের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়। ইফেক্ট টা ইভেঞ্চুয়ালি তাদের ক্যারিয়ারের উপর পড়ে। ফলাফল যখন ম্যাচিউরিটি আনা দরকার তখনও ম্যাচিউরিটি আসে না। এরা সময় নষ্ট করে মরীচিকার পিছে ঘুরে।
সুহান বেশ চাপা স্বভাবের একটি ছেলে,  কারও সাথেও তেমন একটা যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ রাখার ইচ্ছাও নেই। ক্যাম্পাসে ঢোকার আগে সে মোটামুটি একটা প্রতিজ্ঞা করেছিল যে ক্যাম্পাসে উঠে সে ফ্রেন্ড বানাবে না। কিন্তু তারপরেও অনেকের সাথে অনেক ভাবে যোগাযোগ হয়েছে/যোগাযোগ রেখেছে।
ক্যাম্পাস লাইফ টা ঠিক যেরকম প্রেডিক্ট করেছিল সুহান তেমন টা হয়নি। এখানে মোটামুটি সবাই কোনমতে পাশ করে বের হবার উদ্দেশ্যে থাকে। কোন ইনভেন্টিভ কাজ কর্ম এখানে কেওই করে না। এদেরও দোষ দেওয়া যায় না। আসলে সময় কই।
সবাইকে এক রকম ঘোরের মধ্যে রেখে দিয়েছে এই ক্যাম্পাস কর্ত্রীপক্ষ। এই একই দল দুমুখো সাপের মতো কাজ করে। এক দল বলে পড়াশোনা না করলে রেজাল্ট খারাপ হবে। আর প্রাইভেট ভার্সিটিতে রেজাল্ট খারাপ করা আবার আরেক বিপদ। রিপিট দাও,ফিস দাও,নতুন করে এটা সেটা করো। আরেকদল বলবে কাজ কর,কাজ শিখ, নাহলে পরে যেয়ে প্রোফেশনাল লাইফে উন্নতি করতে পারবে না। বিশাল বিপদ একটা করতে গেলে আরেকটা হয় না। কেও কাজ শিখতে যাবে,পড়া হবে না। আর শুধু পড়তে থাকলে কাজ কিছুই শিখবে না।
এগুলো তো যাই হোক ক্যাম্পাস থেকে হয়। এ বাদেও বুলি(Bully) করা, ঝামেলা পাকানো এসব তো নিজেদের ভিতরেও হয়। ক্যাম্পাসে এসে সুহান টের পেল আসলে সবাই ক্যাম্পাসে পড়ার জন্য ভর্তী হয় না। কারও কারও আবার অন্যান্য নিয়ত থাকে। আসলে বর্তমান অবস্থা এমন হয়ে গেছে সার্টিফিকেট না থাকলে চাকরী মেলে না। চাকরী না পেলে ভবিষ্যৎ এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই কেও কেও কোনরকম পাশ করার জন্য ক্যাম্পাসে ভর্তী হয়।  আশায় থাকে অন্তত সার্টিফিকেট টা থাকলে কিছু একটা করা যাবে।
এদের মধ্যে আবাবার অনেকেরই কাজ করার প্রতি অনীহা থাকবে। তারা নিজেরাও কাজ করবে না,আবার অন্যেরা কাজ করলেও তারা নাক সিঁটকাবে। ক্লাসে এমন ঝামেলার সম্মুখীন হওয়া লেগেছে। একবার একটা পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারে সুহান রাজী না হলে রিক্ত ক্লাসে বলেছিল," সুহান,তুই কি সারাজীবনই এমন আঁতেল হয়ে থাকবি।"
অন্য কেও হলে ক্ষেপত। আঁতেল এর আক্ষরিক অর্থ টা তেমন কিছু না হলেও ভাবার্থ টা অনেক ভয়ানক। সুহান কিছু বলে না। এদের মত কারও সাথে ঘোরাঘুরি করা পিকনিক করে বেড়ানো এগুলো সুহানের ভিতর থেকে অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কোথাও বেড়াতে গেলেই ২ দিন ধ্বংস। ২ দিনে কি কি করা যেতে পারে এ ব্যাপারে এদের কারোরই কোন অনুমান নেই।
মাঝে মাঝে সুহান হতাশাবোধ করে। খুব একা মনে হয় নিজেকে। আশেপাশে আরও হতাশ মানুষ আছে। এরা অনেকেই নিজেদের হতাশাগ্রস্থ করে রাখে। কেও দিনের পর দিন ধোয়াঁ উড়িয়ে নিজেদের এই মিথ্যা হতাশা কাটাচ্ছে। কেও শুনছে হতাশাবাদীদের গান। অথচ সময় টা কাজে লাগাচ্ছে না। কি অদ্ভূত। এরা নিজেদের সমস্যা এবং সমাধান দুইই জানে অথচ কিছুই করে না।
একটা ব্যাপারে সুহান নিশ্চিত ছিল। এইখান থেকে যত দ্রূত সম্ভব বের হতে হবে। আবেগ দেখানোর কোন সময় নেই।

https://drive.google.com/file/d/1_r8qIv7FhOnCDa8hgaxU3Z5YxzpnWPIL/view?usp=drivesdk