Wednesday, August 30, 2017

অভিশপ্তেরা Chapter-2: ইতিহাস

Chapter-2 (ইতিহাস)

অনেকের মুখেই হয়ত শোনা যায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যাবস্থার অবস্থা খারাপ। এখন যদি জিজ্ঞেস করা যায় কিভাবে খারাপ, অনেকেই বলতে পারবে না। আসলে ঘটনা টা কি? সবাই এই শিক্ষাব্যবস্থা কে মুখ খিস্তি দেয় কেন? সকালের ঘুমটা ঠিকমত হয় না বলে? টাকা নষ্ট হয় এজন্য? নাকি সময় নষ্ট হয়? নাকি অন্য কিছু?
এই কথাটা পরে বলব। এখন একটা সাধারন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইন্টার এর পর বাংলাদেশে সাধারনতঃ ছাত্রছাত্রী দের যে ক্লাসিফিকেশন আছে সেগুলো হল, (১) এক দল এডমিশনের জন্য কোচিং এ ছোটে। (২) এক দল গিয়ে জাতীয় বিশ্ব্যবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। (৩) আরেক দল আছে যারা আগে থেকেই জানে এসব করে কোন লাভ নাই, যেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ঠাঁই করে নেয়।
এরপর আসি (১) এর দলে। এরা কোচিং শেষ করে সারাদেশ টেস্ট দিয়ে বেড়াবে। এদের আবার ভাগ আছে। (১) এক দল আছে যারা প্রথমেই চান্স পেয়ে যায়।(২) অন্য এক দল।এরা চান্স পায়,কিন্তু মনের মত না।পরের বার আবার চান্স পেতে হবে তাই ভর্তি হয়ে বসে থাকে,ক্লাস করে না। যদি চান্স না পায় তাহলে যেটায় ভর্তি ছিল সেটা কন্টিনিউ করে।(৩) আরেক দল চান্স না পেয়ে প্রাইভেট এ চলে যায় অথবা জাতীয়। (৪) আরেক দল কোথাও চান্স না পেয়ে আবার এডমিশন কোচিং শুরু করে।
এর ভিতর আবার (৪) এর দল তারপরেও কোথাও চান্স না পেয়ে প্রাইভেট এ চলে যায়। সুহান হল সেরকম এর ভিতর একজন। তবে ব্যাপারটা এত সহজে হয়নি। সুহানের ইচ্ছা ছিল সে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়বে। কিন্তু কয়েকটা সমস্যা ছিল। প্রথমত সুহান এর বাড়ির পাশেই একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে যেখান থেকে অনেক অনেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হয়। সাধারনতঃ বাড়ির পাশে যখন এরকম কিছু থাকে সব মা-বাবা,অভিভাবক স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান বাড়ির পাশে এসে চাকরী করুক।
সেদিন সুহান উপজেলা চত্বরে ওয়াইফাই চালাচ্ছিল। তার ছোট কাকু ফোন দিয়ে বলল ভর্তীর ব্যাপারে। তাকে বুঝানো হয়েছিল সে যেন ইলেক্ট্রিকাল ইলেক্ট্রনিক্স এ ভর্তি হয়। খোঁজ নিয়ে জানল ইউনিভার্সিটির CSE এর সিট শেষ। নিরুপায় হয়ে সে এই সাবজেক্ট টাই বেছে নিয়েছিল।
প্রথমের দিকে সে টের পায়নি আসলে ঘটনা টা কি ঘটেছে। কিন্তু পরে বুঝল CSE আর EEE এর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। তার উপরগ  ডিপার্টমেন্ট এর ক্যাঁচাল। বেচারা সারাদিন পড়ে অথচ রেজাল্ট করতে পারে না। ১ম সেমিস্টার এ এর জন্য বাড়িতে কঠিন বকাঝকাও খেতে হয়েছে তাকে। সুহান এটা নিয়ে অনেক মন খারাপ করেছিল। এই এখনও তাকে স্কুল-কলেজের মত বকা খেতে হবে ভার্সিটি উঠে? এই ছিল কপালে?
২য় সেমিস্টার থেকে অবশ্য ব্যাপারটা ঠিক হয়ে গেছিল। তাকে আর বকাঝকা করা হত না। ২য় সেমিস্টার এ সে পড়েছিলও অনেক। কিছুটা খাওয়া-দাওয়া ভুলে পড়ার মত। এর জন্য তাকে যন্ত্রনাও কম পোহাতে হয়নি। সেই সেমিস্টার এ সুহান এর মাঝেমধ্যেই প্রচন্ড মাথাব্যাথা হত। প্যারাসিটামল খেতে খেতে এমন অবস্থা হয়েছিল নর্মাল ডোজ আর কাজই করত না। এরপর সে ক্যাফেইন+প্যারাসিটামল খাওয়া ধরেছিল।
কিছুদিন যেতে যেতে সুহান বুঝল আসলে এত মাথা ঘামিয়ে পড়ার কিছুই নেই। সবই মুখস্থ। কিন্তু সমস্যাটাও শুরু হল সেখানে। সুহানের মুখস্থ বিদ্যা অনেক খারাপ। এইসব প্যাটার্নলেস ম্যাথ,হিস্টোরি,সোসিওলজি নিয়ে ১ম সেমিস্টার থেকেই সে অনেক কনফিউজড ছিল। ২য় সেমিস্টার এ তার রেজাল্ট অবশ্য ভাল হয়েছিল। তবে মাথাব্যাথাটা আরও হল ৩য় তে উঠার পর। সেটা পরের গল্প। তার আগে আমরা সেই প্রশ্নটায় যাই।
সেটা হল, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেন খারাপ? কয়েকটা কারন আছে। তবে সুহান মনে করে ঠিকমত ম্যাথ না শেখা/শেখানোটা এর অন্যতম কারন। ইন্টারমিডিয়েট এ উঠার পর সুহানকে ম্যাথ নিয়ে ভুগতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলাফল, সে এখনও পর্যন্ত জানে না ক্যালকুলাস এর ম্যাথ গুলো করার উদ্দেশ্য কি! ক্যালকুলাস এর ফর্মূলা ফিজিক্স এ কেন!
ক্যালকুলাস সম্পর্কে সুহানের আগ্রহ হয় যখন সে মোঃ জাফর ইকবালের গল্পের বই পড়ত। সেখানে লেখা ছিল কিভাবে ১২-১৩ বছরের একটি ছেলেকে তার বাবা ক্যালকুলাস শিখিয়ে দিচ্ছে। অথচ সে নিজে কিছুই জানে না বুঝে না। ইন্টারমিডিয়েট এ উঠে সে ক্যালকুলাস টা অনেক ভাবে ভিজুয়ালাইজ (দৃশ্যমান) করার চেষ্টা করেছে তারপরেও লাভ হয়নি।
উদ্ভাস এ কোচিং করতে গিয়ে যেদিন সে ম্যাথে ফাংশনের ক্লাসটা করতে যায় সেদিন সে টের পায় আসলে ঘটনা কি? এই এতদিন ধরে সে জানতই না যে ফাংশন জিনিসটা কি। অথচ সে এই টপিক ক্লাস ৭/৮ থেকে করে আসছে। তাহলে এতদিন কি করল সে? ম্যাথ মুখস্থ করেছে। তারপরের কাহিনীগুলো আরও ভয়াবহ। সে এই ক্যালকুলাস শেখার জন্য অনেককিছু করেছে। জাপানে ক্যালকুলাস শেখার জন্য একটা কমিক্স আছে, এটাও সে পুরোটা ঘেটে দেখেছে। লাভ হয়নি।
ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেও সে ম্যাথ এর জটিলতা থেকে রক্ষা পায়নি। ইন্টারে থাকতে সে এক স্যারের কাছে ম্যাথ করত। এখনও সুহান সেই স্যার এর কথা মনে করে। উনিই এর থেকে ভাল ছিলেন। অন্তত নিজে থেকে কিছু বলতেন। এখানে কেও কিছু বলে না। শুধু শীট দেখে বোর্ড এ অংক করানো হয়। এটার কপি এক্সামে ছেড়ে দিলে তারপর পাশ।
ততদিনে সুহান বুঝে গেছে আসলে CSE এর সাথে EEE এর পার্থক্য টা কোথায়। একটা সাবজেক্ট এ প্রোগ্রাম শেখানো হয়। আর একটায় প্রেশার দেওয়া হয় টেলিকমিউনিকেশন আর পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট এ। বাংলাদেশে চাহিদা যেটার বেশি আরকি।
ক্যাম্পাসে উঠার পর সুহান একটা গোঁড়ামীতে ভুগেছিল অনেকদিন। সে ক্যাম্পাসে শুধু পড়তে এসেছে। বন্ধু সে বানাবে না। বান্ধবী তো ভুলেও না। যদিও অনেককে সে পছন্দ করেছে বন্ধু-বান্ধবী হিসেবে, কিন্তু কাওকে সময় দেয়নি। তার রুম মেটদেরকে নিয়েও তার বিশেষ মাথাব্যাথা ছিল না। সারাদিন শুধু পড়ত। আর খুব বেশি খারাপ লাগলে কার্টুন/মুভি দেখে কাটিয়ে দিত। প্রোগ্রাম এর উপর ঝোঁক ছিল অনেক। তাই সময় পেলে ক্যাম্পাস এ কম্পিউটার ল্যাব এ বসে কাজ করত। এই গোঁড়ামীটা অবশ্য ৩য় সেমিস্টার এ এসে উলটে যায়। তারপর থেকেই জীবন এর সাথে তার ভাব হয়। এই কাহিনীটা পরে একসময় বলি।
১ম সেমিস্টার এ সুহান অনেক আপসেট ছিল। কয়েকটা কারনে। আসলেও কি সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবে? নাকি মাঝপথে এসে ছেড়ে দিতে হবে?  এত টাকা দিয়ে পড়ছে শেষমেষ কি হবে? বাবা-মা কি তাদের কোনকিছু বিক্রি করে দিচ্ছে না তো? এর চাইতে কি ফর্ম টা নিয়ে গিয়ে কুষ্টিয়া চলে যাবে ম্যাথ এ অনার্স করার জন্য..............। এরকম ভাবতে ভাবতে ১ সেমিস্টার পার হউয়ার পর সে বুঝতে পারে এর চাইতে ভাল করে পড়তে হবে। রেজাল্ট করতে হবে। ব্যাস ওয়েভার! তাহলেই হয়ত ঝামেলা ঘুঁচবে।
ব্যাপারটা এতটা সহজ হয়নি তার জন্য। তবে চোখ কান খোলা রেখে সে কয়েকটা ব্যাপার ধরেছিল। প্রথমত, EEE এর মত একটা সাবজেক্ট এ পড়ে এমন কেও কেও আছে যারা কিছু না বুঝেও ভাল রেজাল্ট করে। কেও কেও আছে কোনরকম রেজাল্ট করে বের হোক। তাহলে এদের মূল উদ্দেশ্য কি? আর তার চাইতে বড় কথা এরা পাশ করে কিভাবে? পুরো ক্যাম্পাসে ফার্মেসীতে একটা মেয়ে ছিল যার নাকি সব সেমিস্টার এই রেজাল্ট ৪/৪ থাকত। সে তাহলে কিভাবে পড়ত?
কিছুদিন পর সে টের পায়, বড় ভাইদের সলভ এর ব্যাপারে। সেগুলো পড়েই সবাই পাশ করে। কেও কেও আছে তাদের বন্ধুদের থেকে কোনরকম বুঝে নেয়। আরও একটা ব্যাপার আছে সেটা হল প্রশ্ন রিপিট হয়ে। তার মানে কেও যদি আগের বছরের প্রশ্ন সমাধান করে এক্সাম দিতে যায় তার জন্য ভাল রেজাল্ট করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার না। এই থিওরীগুলো ২য় সাময়িক এ তার অনেক কাজে লাগে। তখন সে কোনরকম গুছিয়ে নিতে পারে।
ক্যাম্পাসে আসার পর একটা ব্যাপার নিয়ে তার মেজাজ খারাপ হত। যেকোন প্রোগ্রাম নিয়ে সকলের মাতামাতি। ক্যাম্পাসে যে প্রোগ্রামই হোক না কেন সেটাকেই সে ওয়েভার খাওয়ার একটা ধূর্ততা হিসেবে দেখত। একটা প্রোগ্রাম একটিভেট করতে যে পরিমান সম নষ্ট হয় এর থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো ভাল। যদিও সোসালাইজেশন এর দোহাই দিয়ে অনেকেই এই প্রোগ্রাম করে, কিন্তু এর জন্য প্রতি সেমিস্টার এ কষ্টটাও কম হয়না। মোটামুটি এভাবেই চলছে সুহানের পড়াশোনা। আর সুহানের মত আরও অনেকের। আচ্ছা এই সবারও কি তাহলে সুহানের মত ইতিহাস আছে? নাকি অন্যরকমও আছে? থাকতে পারে।

এই চ্যাপ্টার এর পিডিএফঃ https://drive.google.com/file/d/0B6i1IEvpnM6zYnJHMkIyamxxbmM/view?usp=drivesdk

চ্যাপ্টার ১ এর লিংকঃ https://drive.google.com/file/d/0B6i1IEvpnM6za2ZrSWgwc0liRms/view?usp=drivesdk

Sunday, August 27, 2017

অভিশপ্তেরা(Intro)

অভিশপ্তেরা
                     -মোঃ সোহান আরাফাত






ভূত প্রেত নিয়ে লেখা কিছু না।এই গল্পটা আমি সেই সব কিশোর/কিশোরীদের জন্য লিখছি যারা হয়ত অনেক চিন্তায় আছে (অথবা ভয়ে আছে) তাদের আশেপাশের দুনিয়াটা এমন কেন? অনেকেই লিখে থাকেন গল্পের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।আমি এমন কিছু লিখব না। মিল অমিল সেটা পাঠক/পাঠিকারা ঠিক করবেন। গল্পটি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে লেখা নয়। এই গল্পটি আমার ব্লগে পাবেন। www.limitless13579.blogspot.com।  এখানে ovishoptera ট্যাগ এ লেখাটা পাওয়া যাবে। চ্যাপ্টার বাই চ্যাপ্টার গল্পটি রিলিজ হবে।।কতদিনে লেখা শেষ হবে জানি না!

-ফার্মগেট, ঢাকা।
২৫-আগস্ট,২০১৭









Chapter-1 (বন্ধুত্ব এবং ঘৃণা)
সুহানের হাতে একটা সমস্যা ছিল। খুব বেশি উত্তেজিত হলে ওর হাত কাঁপতো। অত্যন্ত বাজে একটি সমস্যা। এই সমস্যাটা শুরু হয়েছিল ক্লাস ২/৩ থেকে। এর কোন সঠিক সমাধান সে পায় নি। অনেকবার চেষ্টাও করেছে সমস্যাটা পাশ কাটিয়ে এক্সাম হল এ জোরে লেখার জন্য, কিন্তু লাভ হয়নি। জোরে লিখতে গেলেই হাত এঁটে আসতো। জোর করে লিখতে গেলে লেখা বোঝার মত থাকত না। ক্লাস ৩ থেকে ৮ পর্যন্ত এর জন্য তাকে এক্সাম এর মধ্যেই ৫ মিনিট করে বসে থাকা লাগত। প্রচন্ড ব্যাথা হত হাতে। কিন্তু কিছু করার নেই,হাত কাঁপছে তো!
টিচাররা এর জন্য বকেছেও অনেক। ব্যাপারটা আসলেও উদ্ভট। একটা ছেলে লিখতে লিখতে হুট করে লেখা থামিয়ে দিচ্ছে। এই খবর বাসা পর্যন্তও চলে গেল। বাসায় তার মা  বকাবকি শুরু করল........
ক্যাম্পাসে বসে সুহান এগুলো চিন্তা করছে। এখন সমস্যাটা নেই।একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ২ বর্ষের ছাত্র সে। হাতের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই চিন্তাগুলো চলে আসে তার মাথায়। কি কঠিন দিন ছিল সেসব। মনে হলেই খারাপ লাগে। হঠাৎ রিমার ডাকে চমকে যায় সে। সুহানের ক্লাসমেট। সুহানকে ডেকে বলল,"সুহান ক্লাসে যাবে না?"
কয়েকটা কারনে সুহান রিমাকে পছন্দ করে না। অন্যতম কারন এই মেয়ে পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক আত্মকেন্দ্রিক। আরও ভালোভাবে বলা যায় স্টুডেন্ট ভাল হওয়া সত্বেও ভাব নেয় কিছুই পড়ে নি।কিছুই জানে না। অথচ রেজাল্ট অনেক ভাল। সুহানের মাঝেমাঝেই মনে হত মেয়েটাকে ডেকে বলে, "তোমাকে আমি ঘৃণা করি।" কখনও বলে নি। সুহানের একটা কোড লিস্ট আছে,সেখানে একটা নিয়ম আছে সেটা হল কারো মনে সে কখনও কষ্ট দেবে না। এটা সে ইন্টারে পড়াকালীন বানিয়েছিল। তাই সুহান হেসেই উত্তর দিল," চল একসাথেই যাই।"এই বলে দুইজন চলে গেল ক্লাসে।
যদিও রিমাকে সুহান অপছন্দ করে তারপরেও এই একটা মেয়ে সবার থেকে আলাদা ছিল। তার সেমিস্টার এর সব মেয়েরাই সুহানকে তুই করে ডাকত। সুহানের এটা মোটেও ভালো লাগত না। মেয়েদেরকে (সমবয়সী/বয়সে বড়) সাধারণতঃ সে তুই-তোকারী করে না। শুধু তার ফুপি বাদে( বয়স সুহানের থেকে ১২-১৩ বছর বেশি)। একটা মেয়ে যদি তুই বলা শুরু করে তাহলে তাকে তুমি বলাটা বেখাপ্পা হয়ে যায়।বাধ্য হয়ে সুহানও তুই বলা শুরু করে।তবে ব্যাপারটা ধরে রাখতে পারে না,তুমি চলে আসে। এই একটা মেয়ে সুহানকে কখনও তুই বলার চেষ্টাও করে নি। ফেসবুকেও না।সামনা সামনিও না। সুহানও কখনও বলে নি।
দুইজন একই সাথে ক্লাসে ঢুকল। প্রায় সময়েই রিমার পাশে বসে সুহান। সাধারণত সবাই পিছনে গিয়ে বসে।সুহান সামনে বসে।আর রিমাও সামনে বসে। এটাও আরেক ফেনোমেনা। ক্লাসে বেশ মনোযোগী দুইজনেই।
তখনও ক্লাস শুরু হয়নি। সুহান আবারও চিন্তায় ডুবে গেল। ইন্টারমিডিয়েট এর সময় সে সায়েন্স এর যে ক্লাসগুলো করত সেখানে স্টুডেন্ট ছিল সব মিলিয়ে ২৩ জন। সেটাও খাতা কলমে। কিন্তু কখনই ১০/১১ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী দেখা যেত না। ওরা সবাই সামনের বেঞ্চে বসত। শীতকালে ব্যাপারটা মজার হত।
ক্লাস শুরু হয়েছে। সুহানের পছন্দের ক্লাস হচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক্স এর উপর। এই সাবজেক্ট টা ওর খুব প্রিয়। মেশিন অথবা মেকানিকাল টা তার মোটেই ভাল লাগত না। বেশ কিছু কারনে ভালো লাগত না। তার মধ্যে একটা হল রুটিন এর টাইমিং। ক্লাসগুলো খুবই বাজে সময়ে দেওয়া। দেখা গেল কোনদিন দুইটা ক্লাস কিন্তু ৬ ঘন্টার মত ক্যাম্পাসে থাকা লাগে। এর চাইতে বাসায় ঘুমাতে বেশি ভালো লাগে সুহানের। এমনিই প্রাইভেট ভার্সিটির পড়া,তার উপর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট আসতে জান ছিঁড়ে যেত ওর। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে ঝামেলাজনক ব্যাপারটি হল এদের কোন হোস্টেল নেই। যে যেভাবে, যেখানে ইচ্ছা থাকো। এর জন্য অসুবিধাও কম হয় না। অনেকেই আছে যারা দূরে ফ্যামিলির সাথে থাকে। সেখান থেকে আসতে যেতেই সারাদিন শেষ হয়ে যায়। যদিও মোহাম্মদপুর অনেক দূরে ছিল না। কিন্তু প্রতিদিন বাসে করে আসাটা ওর জন্য কষ্ট হয়ে যেত। এই সেমিস্টার এর পর থেকে সে ফার্মগেট এ চলে যাবে। এমন একটা যায়গায় উঠবে যেখান থেকে ক্যাম্পাস টা পায়ে হাঁটা দূরত্বে হয়।
*
ফার্মগেট! শিক্ষার ব্যাবসাকেন্দ্র। কোচিং-ক্যাম্পাসে ঠাসা এই জায়গাটা তে শুধু শিক্ষার ব্যাবসা চলে। অন্তত সুহান তিন বছর আগে থেকে যা দেখে আসছে তাতে করে এর চেয়ে ভালো করে কিছু বলা যাবে না। প্রতিদিন সুহান এখানে আসা যাওয়া করে। কোচিং-এ পড়া ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা হয়, ভীড়ে গায়ে ধাক্কা লাগে। যখন বাসে উঠে তখন দেখে অনেক ছেলেমেয়ে কোচিং এর ২/৩ পাতার শীট এর দিকে বিরস-বিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। একটাই আশা, পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে চান্স পাওয়া লাগবে। সুহানের মনে পড়ে যায় এই দিনগুলোর কথা। উদ্ভাস এ ক্লাস করত সে। বাসায় টেস্ট এর নাম্বার যেত প্রতি সপ্তাহে। এই পাবলিক পাবলিক করে কত কথা না শুনতে হয়েছে তাকে।
সুহান একটা হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। এই যে ছোটবেলা থেকে যত প্রকার ব্রেইনওয়াশ টা করেছে সবাই, এর ফলাফল টা কি হল? শূণ্য নাকি কিছু একটা। সে কি এটা চেয়েছে নাকি তার বাড়ির মানুষগুলোর ডিসিশন এ তার এই দৌড়াদৌড়ি। সে কি হতে চেয়েছিল? আর কি হয়েছে? আদৌ কি কিছু হতে পেরেছে?নাকি........
পাশ থেকে জীবন ঠেলা দিয়ে বলল সুহানকে," এই সুহান,কি বিড়বিড় করছিস?ক্লাস তো শেষ চল বাইরে যাই।" ক্লাসের এই একটা ছেলেকে সুহান পছন্দ করে। ক্যাম্পাসে ১ টা বছর পার করার পরেও সুহান কারও সাথে বন্ধুত্ব করতে পারেনি। ক্লাস ৬ থেকে সুহানের একটাই ফ্রেন্ড ছিল,শিশির। ফ্রেন্ডশীপ বলতে সুহান যেটা বুঝে সেটা হল, "বন্ধু হল এমন একটি প্রানী যারা এক জন আরেকজনের সমস্যা টা বুঝে,যার সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করা যায়"। ছোটবেলা থেকেই সে দেখে এসেছে সবাই বন্ধুত্ব করে কোন না কোন একটা কারনে। কেও পড়াশুনার ক্ষেত্রে,কেও ব্যাবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে,কেও বা আবার চাকরী করতে গিয়ে। শিশিরের সাথে সুহান এর বন্ধুত্ব হওয়ার কারন টা পড়াশুনার উছিলায় হয়নি।সে চায়নি পড়াশুনা দিয়ে তাদের বন্ধুত্ব শুরু হোক। এই বন্ধুত্ব বেশিদিন টিকে না।
এরা প্রায় একই টাইপের ছেলে ছিল। দুইজনেই গল্পের বই পড়ত। সায়েন্স নিয়ে দুইজনেরই আগ্রহ ছিল প্রচন্ড। এভাবেই মতের মিল হতে হতে এরা বন্ধু হয়। যেহেতু পড়াশুনা থেকে এই বন্ধুত্ব শুরু হয়নি তাই ১০ বছর পরেও এদের মধ্যে বন্ধুত্ব একই রকম থেকে গেছে। যদিও দুইজন দুই সাবজেক্ট এ আছে।কিন্তু তারপরেও তাদের যোগাযোগ ভাল।
এই জন্যেই হয়ত নতুন ফ্রেন্ড বানাতে পারেনি সুহান। গত এক বছরে অনেক ছেলেমেয়েই তাকে দোস্ত,বন্ধু বলেছে,কিন্তু কারও চোখেই সে শিশিরের ছায়া দেখে নি। জীবন একটু অন্যরকম ছেলে। ভাল খারাপ যাই হোক, নীতিবান ছেলে। সবার সাথে সমান ভাবে মেশে। কারও উপর জোরাজোরি করা অভ্যেস নেই। হাসিখুশী,ফ্লার্টি টাইপ। শিপন এর পরে জীবন এর সাথেই বেশি কথা হত সুহানের। একেই বন্ধু ভাবে সুহান। যদিও লাইব্রেরী তেই বেশি সময় দেয় সুহান। তারপরেও জীবনের সাথেই সে বেশি ঘোরে। ব্যাপারটা রিমা অপছন্দ করে অবশ্য। জীবনের ফ্লার্টিনেস টা সহ্য হয় না রিমার।
প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর সুহান ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারে নি। তার জন্য ক্যাম্পাস লাইফ টা একটা বিভীষিকাময় যাত্রা ছিল। এক টানা ক্লাস,দিনের পর দিন। যদিও ছুটি পেত সপ্তাহে ২ দিন কিন্তু তারপরেও এই ২ দিন টাও অনেক যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে যেত। সারা সপ্তাহের পড়া এই দুই দিন কম্প্লিট করা লাগত। সবাই নতুন ছেলেমেয়ে,কেও কাওকে চেনে না। কি অদ্ভূত একটা অবস্থা। তারপরেও ২-৩ দিনের মধ্যে সবাই এমন একটা ভাব শুরু করল যেন এরা একে অপরকে অনেকদিন ধরে চেনে। এদের অনেক মিল। সুহান প্রথমে কনফিউজড ছিল। কেও কাওকে জানে না চেনে না তারপরেও এই হঠাৎ মিলমিশ। অদ্ভূত!!
সুহানের এলাকার কিছু ছেলেমেয়ে ছিল যারা আগে থেকেই ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ছিল। এদের কারও কারও সাথে সুহানের ভাল সম্পর্ক কারও সাথে খারাপ। তবে সুহান চেয়েছিল এবার তার একটা ফ্রেশ স্টার্ট হোক। যদিও তার স্কুলজীবনের এক ক্লাসমেট  "রিক্ত" হতে দেয় নি। এই একটা ছেলে যে কিনা সুহান এর টাইপ এরই না,সে এসে পড়ল সুহান এর সেকশন এই,একই ক্লাসে। এই ছেলেটা অনেক বিরক্ত করত সুহানকে। ২য় বর্ষে এসে অবশ্য ব্যাপারটা ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু ফ্রেশ স্টার্ট টা হয়নি সুহানের।
এই ফ্রেন্ডস,রিলেশন,ক্লাসমেট এর কনফিউশন নিয়ে সুহান এর দিনগুলো পার হচ্ছিল। এই দৌড় ঝাঁপ এর মাঝে সুহান একটা ব্যাপার টের পায়নি। লাইফ তাকে ভয়াবহ একটা জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে।

PDF : https://drive.google.com/file/d/0B6i1IEvpnM6za2ZrSWgwc0liRms/view?usp=drivesdk