Friday, September 8, 2017

অভিশপ্তেরা Chapter-3 সাইকোগ্রাফি

Chapter-3 (সাইকোগ্রাফি)

সুহানের একটা অভ্যাস ছিল। যেখানেই যেত, সেখানেই সে লোকজনের আচার-আচরন এনালাইসিস করতে লাগত। তার মতে, "ছেলে হোক মেয়ে হোক সাইকোগ্রাফি দিয়ে অনেকের ব্যাপারে অনেককিছু জানা সম্ভব।" এটা করতে গিয়ে অবশ্য সে কারও মনে কষ্ট দেয়নি। কিন্তু নিজে অনেক জটিলতায় ভুগেছে।
যেমন ধরা যাক এক ছেলের কথা। এই ছেলে অন্য এক সেকশন এর ছেলে,তারই সেমিস্টার এর। এই ছেলে নাকি কাকে একবার খুন করেছিল। কিভাবে কিভাবে জানি সুহান বের করেছিল অতীতে এই ছেলে কাওকে খুন করেছে। ঘটনা সত্য ছিল। এটা সে এতদিন পর্যন্তও চেপে রেখেছে। এরকম অনেকের ব্যাপারে অনেককিছু জানত সে। তার প্রেডিকশন এর ক্ষমতা অনেকটা সত্যের মতই সত্য ছিল।
ক্যাম্পাসে এসে সে কয়েকটা ব্যাপার দেখেছে। যেসব শিক্ষার্থীরা অনেক দূরে থেকে আসে তারা আস্তে আস্তে রেজাল্ট খারাপ করে। আবার খুব কাছে যারা থাকে তারাও।  দূরের টা হয়ত করতে পারে। কাছেরটা কেন? কারন কাছে থাকলে তারা অলস হয়ে যায়। এছাড়াও কাছে থাকলে অনেকের যাওয়া-আসা থাকে। এটাও একটা সমস্যা। তাই সুহান ছিল একেবারে কাছেও না আবার দূরেও না। কিন্তু ২য় বছরে তার এই ডিলিউশন টা কেটে যায়। চলে আসে ক্যাম্পাসের কাছে।
এবারে একটা প্রশ্ন করি। সাইকোগ্রাফির প্রেক্ষিতে এর একটা প্রয়োজন আছে। এইযে বলা হয়, "ছেলে মেয়ে সবাই সমান" এই কথার যৌক্তিকতা কতটুকু? আসলে কথাটার মানে কি? এই কথাটা কই আদৌ সত্যি?
মৌলিক অধিকার বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা সবার ভিতরে সমানভাবে যাতে বন্টিত হয় সেটাই এখানে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল দুইজনের সাইকোগ্রাফি কতটুকু সমান? এই এক যায়গাতেই কখনও ছেলে মেয়ে সমান হতে পারবে না। কিছু একটা অমিল থেকে যাবেই। এর একটা হালকা-ঝাপসা উদাহরন সুহান পেয়েছিল।
সে দেখেছে ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট এ মেয়েদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু, EEE তে কম। EEE তে লজিকাল পড়াশোনা বেশি হয়। যদিও মেয়েরা পড়া বুঝে কম কিন্তু মেয়েরা অনেক বেশি ডিটারমাইন্ড থাকায় পড়া মুখস্থ করে পার পেয়ে যায়। কিন্তু এই পড়া বুঝার জন্য মেয়েরা কম ঝামেলায় পড়ে না।ক্যাম্পাসের ছোটভাই থেকে শুরু করে বড় ভাই সবার সাথেই তাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। মেয়ে বলে ব্যাপারটা হয়ও সহজে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে হয়ে পড়ে। একে তো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, প্রচুর টাকা; তার উপর আবার পরিবারের চিন্তা, চাকরীর চিন্তা। আর বাড়ির বড় ছেলে হলে তো কথাই নেই।
তাই বলা যায় মেয়েরা ছেলের মত,অথবা ছেলেরা মেয়ের মত চলতে হবে এর কোন মানে নেই। চলতে সেভাবে যেভাবে চলাটা জরুরি। ছেলেদের কথা ধরি, এরা ইমার্জেন্সিতে রাস্তার পাশে হিসু করবে। তাও দাঁড়িয়ে। মেয়েরা কি পারবে? আবার মেয়েরা বাচ্চাকাচ্চা যেভাবে বড় করে,একটা মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে একজন মা তার মেয়েকে দেখভাল করে,কোন ছেলে কি পারবে? ছেলেরা তাদের অন্তর্বাস ৪/৫ দিন না ধুয়ে পরলেও কিন্তু তাদের বিশেষ কোন সমস্যা হয় না। এটা একটা মেয়ে করুক, আমি নিশ্চিত তার যোনিমুখে ইনফেকশন হবে। একটা ছেলে কখনও শিশু পেটে ধরতে পারবে না। (আমি তো ছেলে। তাই মেয়েদের ব্যাপারে এতকিছু বলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।) তাই যার যেমন টা দরকার সেভাবে চলা উচিৎ। জোর করে একজন আরবকজনের মত করে চলার প্রয়োজন নেই। সুহানের সবসময়ই মনে হয় EEE তে মেয়েদের পড়াশোনাটা একটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। কারন কোন মেয়েই আরেকজনকে পড়া পড়ে বুঝিয়েছে এমনটা পাওয়া যায়নি।
*
জীবন কে উপর থেকে যতটা "মেয়ের-পিছে দৌড়ানো" মার্কা মনে হয় সে কিন্তু তেমনটা নয়। এই ছেলেও মেয়েদের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারনা রাখে। ব্যাপারটা সুহান টের পেয়েছিল বেশ জটিল একটা ঝামেলায় পড়ে। ঘটনা টা পরে বলি। তার আগে রিমার ব্যাপারে সুহানের চিন্তাটা পরিষ্কার করে নেই।
সুহান একটা মেয়েকে পছন্দ করে বসে। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বেও রিমাকে সে বলেছিল মেয়েটার সাথে তার একটা যোগসাজশ করে দিক। প্রথমে রিমা আমল দেয়নি, কিন্তু পরে যখন দেখল সুহান বেশ সিরিয়াস তখন অনেকভাবে বুঝিয়েছে এই ব্যাপারে না এগোতে। সুহান তখনও যখন সিদ্ধান্তে অটল ছিল তখন রিমা তাকে বুঝিয়েছিল, "একটা জব করা শুরু কর,তারপর প্রেম কর।" আরো বলেছিল, "একই ক্লাসের তো, হব না,বাদ দাও সুহান।" এরপর সুহান রিমাকে কিছুটা কন্সার্ভেটিভ বা নিয়ম আঁটা মেয়ে বলে মনে করে। এরকম মেয়েরা অনেক বেশি ডিটারমাইন্ড হয়ে থাকে। জীবনটা এদের কাছে শুধু বাঁধাধরা একটা প্যাটার্ন ছাড়া কিছুই নয়। এটা সত্যি যে একটা মেয়েকে সারাজীবনে অনেক ভুগতে হয়, তারপরেও রিমার মত মেয়েরা ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তা করে তাই না, এরা ভবিষ্যৎ কে ভয়ও পায় অনেক।
এতো গেল এক মেয়ের ব্যাপার। কোন কোন মেয়ে নাকি পাশ করার জন্য ভাল ছাত্রদের সাথে প্রেম করেছে এমনও শুনেছে সে। তার সেমিস্টার এর মেয়েগুলা এই সাপেক্ষে অনেক ভাল। তার মানে পুরো ঘটনা মোটামুটি দাঁড়ালো যে প্রাইভেট ভার্সিটির মেয়েগুলো বেশ কাটখোট্টা ধরনের হয়। বয়স বেশি হওয়ার কারনেও এমন হতে পারে, তবে যাই হোক প্রাইভেট ক্যাম্পাসের ছেলে-মেয়ে গুলোর অনুভূতিগুলো অনেকটা মাপা বা সীমিত গোছের। এরা যদি হাসে তার পিছনেও কারন থাকবে, যদি কাঁদে তাও থাকবে, যদি ভালবাসে তাও একটা কারন লাগবে। ম্যাচিউরিটি টা এভাবেই হত হয়। তবে সুহানের চিন্তাগুলো খুব সরল থাকায় এগুলো সে হুট করে বুঝে উঠতে পারেনি।
এখন কথা হল, যে এতগুলো এনালাইসিস করে হবে টা কি? যুদ্ধক্ষেত্রে বন্ধু-শত্রু চেনাটা জরুরী। নাহলে অনেক বিপদে পড়তে হয়। সুহানেরও তাই এনালাইসিসগুলো করা প্রয়োজন ছিল অনেক। তবে সুহান বন্ধুর ব্যাপারটা এড়িয়ে চলার পিছনে একটা কারন ছিল।তার আগে জেনে নেই সুহানের মতে বন্ধু কি?
সুহানের মতে বন্ধু হল সেই ব্যক্তি যার সাথে মনের কথাগুলো খোলাখুলি আলোচনা করা যায়, এবং বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যেটা সারাজীবনের জন্য থেকে যায়। ক্যাম্পাসে এসে সবসময়েই সে দেখেছে এরা শুধু পড়ার জন্য একে অপরকে ফ্রেন্ড বানায়। যদি পড়াশোনার সাহায্য কমে যায় এই বন্ধুত্বও আর থাকে না। এরা কিছুটা একে অপরকে ব্যবহার করে। সুহান কখনও চায়নি সে এভাবে কাওকে ব্যবহার করুক। তাই কারও সাথেই তার বন্ধুত্ব সে নিজেই গাড় হতে দেয়নি। সারা সেমিস্টার এর পড়া সে একাই নিজে পড়ে। খুব কম ক্ষেত্রেই সে সাহায্য নেয়।
তবে এক টাইপের ছেলে-মেয়েদের থেকে সে সবসময় দূরে থেকেছে। যারা পড়া-শোনা কিছুই করে না। এবং এই ছেলেগুলোই দেখা যায় পরীক্ষার আগে পড়াগুলাও কিছুটা খেয়ে উগলে দেওয়ার মত করে পড়তে চায়। এরা আসলে কিছুই বুঝতে চায় না। কিন্তু পুরো জিনিসটার সিকুয়েন্স বুঝতে চায়। তারমানে এদেরকে আবার সবকিছু নতুন করে পড়ানো লাগবে। অসম্ভব! একটা নির্দিষ্ট যায়গায় সমস্যা হলে হয়। যে কিছুই পড়ে নি তাকে কিছু বোঝানো সম্ভব না। পড়ানোর ঠেকা টা স্যার রা নিয়ে রেখেছেন।
এবারে আসি সুহান এর ব্যাপারে। সুহান কে নিয়েই তো পুরোটা লেখা। তাই গল্পের সাথেই থাকুন। সুহানের সাইকোগ্রাফি টা নাহয় আপনারাই করবেন। 

এই চ্যাপ্টার এর পিডিএফঃ

https://drive.google.com/file/d/0B6i1IEvpnM6zcWpBN0J4OVlqbXM/view?usp=drivesdk