Monday, February 12, 2018

অভিশপ্তেরা (বিবিধ অধ্যায়-২)-স্তব্ধ কান্না

 স্রষ্টা এবং শিক্ষকদের মধ্যে একটা মিল আছে।  সেটা হল স্রষ্টা যেমন সৃষ্টির পরিণতি জানেন, শিক্ষকও জানেন তার শীক্ষার্থীদের পরিণতি। তফাৎ টা হল, স্রষ্টা তার নিয়ম রেশিনালি চেঞ্জ করবেন না। কিন্তু একজন শিক্ষক সেটা পারেন। একজন শিক্ষক চাইলে তার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশ-ফেল করিয়ে দিতে পারেন। হেনস্থাও করতে পারেন।
একজন শীক্ষার্থীকে হেনস্থা করার সবচেয়ে সহজ বুদ্ধিটি হল এক্সামের প্রশ্ন। যেহেতু একজন শিক্ষক জানেন তার ছাত্র-ছাত্রীদের কি অবস্থা তাই এনালাইসিস করে তিনি দুইটা ঘটনা করতে পারেন। ১.হয় তিনি এমন কিছু দেবেন যেটা সবাই পারে না, ২.নাহলে এমন কিছু দেবেন যেটা বেশিরভাগ পারে।
এবারে হেনস্থা করতে কি দরকার সেটা আপনি বুঝে গেছেন। জাস্ট এমন একটা টপিক থেকে কোয়েশ্চেন করুন যেটা কিনা কেও পারে না। ফুরিয়ার এনালাইসিস হল সেরকমই একটি টপিক। সুহান ম্যাথ এর কোয়েশ্চেন টার দিকে একধরনের উপহাস্য-বিরস মুখে তাকিয়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে। এটা কি ম্যাথ এর কোয়েশ্চেন নাকি আরও এক সেমিস্টার তাকে বসিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র।
এক্সাম শুরু হয়েছিল ১০ টায়। মোটামুটি দেড় ঘন্টায় আড়াই সেট প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সুহান চুপচাপ বসে ভাবছে কি করা যায়। পাশে কম্পিউটার সায়েন্সের এক্সাম চলছে। তাদের এক এক্সাম, অন্যদের আরেক এক্সাম। পাশে তাকিয়ে সুহান দেখল সেখানে WAN,LAN এগুলো নিয়ে কোয়েশ্চেন। হতে পারে নেটওয়ার্কিং এর এক্সাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার মুখে হাসি চলে আসল। এক্সাম হলে আবার সেই এক গার্ড পড়েছিলেন। সুহানের মুখে হাসি দেখে উনি তেড়ে আসতেছিলেন। সুহান মোটামুটি ৩ সেকেন্ডের ভিতরে স্থির করে নিল টিচারকে খাতা দিয়ে বের হয়ে আসবে। তো যা ভাবা তাই। স্যার আসছিলেন কেড়ে নিতে, সে স্যার কে আপোসে খাতা ধরিয়ে দিয়ে হল থেকে বের হয়ে গেল। এরপরেও তার ভিতরে কোন ভয় কাজ করছে না। বরং মজা পাচ্ছে এই ভেবে, ম্যাথ এক্সাম দিতে গিয়ে, নেটওয়ার্ক এর কোয়েশ্চেন দেখে হেসে ফেলার জন্য স্যার তার খাতা কেড়ে নিচ্ছিল। হয় এই টিচার বিপদে আছে, নাহলে পরীক্ষার্থীরা।
ক্লাস থেকে বের হয়ে নিচে এসে দেখল তারই ডিপার্টমেন্ট এর এক বড় আপু কোয়েশ্চেন হাতে ধরে কান্নাকাটি করছেন। আর এক ভাই মাথায় হাত রেখে তাকে থামানোর চেষ্টা করছেন। এই ব্যাপারটা দেখে একই সাথে সুহানের ভিতরে কয়েকটা ব্যাপার কাজ করছে। একবার ভাবল কাছে গিয়ে তাকে স্বান্তনা দেওয়া উচিৎ, তারপরেই মনে হল ব্যাপারটা ঠিক হবে না। উনারা মাইন্ড করতে পারেন। কিছুক্ষণ পর আবার নিজের কথা ভাবল, ইনাকে তো তাও কেও একজন স্বান্তনা দিচ্ছেন, কিন্তু প্রতিদিন তার উপর যে ঝড়গুলো যায় সেগুলোর কথা কেও হয়ত জানেও না। আর কান্না করতে পারাটাও অনেক ভাল একটা ব্যাপার। সুহান তো তাও পারে না। খুব প্রিয় কোন মানুষের কোলে মুখ লুকিয়ে কান্না করার মাঝে একটা শান্তি আছে।
এইসব আবোলতাবোল ভেবে ভেবে বাসায় আসল সুহান। তারপর চিন্তা করল ম্যাথের কথা। এইযে ম্যাথ গুলো যে করানো হয়। এর উদ্দেশ্য কি? ফুরিয়ার এনালাইসিস জিনিসটা অনেক কাজের জিনিস। সার্কিট সিমুলেশন প্রোগ্রামেও এগুলোর ব্যবহার আছে। কিন্তু এত এত বাজেভাবে ম্যাথগুলো করানো হয় সেটা বলার মতো না।

অনেক্ষণ পরেও সুহান সেই বড় আপুর কথা মনে করছে। হাসিখুশি, ফর্সা একটা মানুষ, জাস্ট এক্সামের এক সপ্তাহ আগে থেকে উনার মুখের এমন অবস্থা হয়েছে যেন মনে হয় এখনি কাদায় পিছলে পড়ে গেছিলেন। ফাইনাল সেমিস্টার, ফাইনাল ইয়ার বলে কথা।

No comments:

Post a Comment